গৌরাঙ্গ লাল দাস,স্টাফ রিপোর্টার, গোপালগঞ্জ:- এ বছরের বোরো মৌসুমে উৎপাদিত ধান নিয়ে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার কৃষকরা বিপাকে পড়েছে। ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় তারা চরম ভাবে হতাশ। ১মন ধান বিক্রি করে পাওয়া যাচ্ছে না ১কেজি গরুর মাংস।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, এ বারের বোরো মৌসুমে কোটালীপাড়া উপজেলায় ১লক্ষ ৬২ হাজার মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হয়েছে। এ উপজেলার লোক সংখ্যা অনুযায়ী চাহিদা ৬১ হাজার ৫শত ৯৪ মেট্রিকটন। অপরদিকে এ উপজেলায় সরকারি ভাবে খান ক্রয় করা হবে মাত্র ৮শত ২৪ মেট্রিকটন।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী প্রায় ১লক্ষ মেট্রিকটন ধান কৃষকদের মজুদ থাকবে। উৎপাদন খরচের চেয়ে বিক্রি মূল্য কম থাকায় এই ধান নিয়ে কৃষকরা বিপাকে পড়েছে। অনেক কৃষকের ঘরে আবার গত বছরের উৎপাদিত ধান রয়ে গেছে। দাম কম থাকার কারণে এ সব ধান কৃষকরা গত বছর বিক্রি করেনি। তাই এসব কৃষকরা সরকারি ভাবে ধান ক্রয়ের বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।
উপজেলার পূর্ণবর্তী গ্রামের কৃষক অলিউল্লাহ হাওলাদার বলেন, আমি এ বছর ২৬বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। প্রায় ১২শত মন ধান আমার উৎপাদন হয়েছে। আমার পরিবারে বছরে ১শত মন ধান খাবার জন্য প্রয়োজন হয়। বাকি ধান আমি বিক্রি করবো। বর্তমানে বাজারে ৫শত টাকা করে মোটা ধান বিক্রি হয়। আমার প্রতিমন ধান উৎপাদন করতে ৬শত থেকে ৭শত টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে বাজারে যে দাম আছে সেই দামে ধান বিক্রি করলে প্রতিমন ধানে দেড় থেকে ২শত টাকা লস হবে।
কুরপালা গ্রামের চয়ন হাওলাদার বলেন, গত শুক্রবার ঘাঘর বাজারে গিয়ে ৫শত টাকা করে মোটা ধান বিক্রি করেছি। বাড়িতে মেহমান থাকায় গরুর মাংস কিনতে হয়েছে ৫শত ৫০ টাকা করে। এখানে এখন ১মন ধান বিক্রি করলে কেজি গরুর মাংস কেনা যায় না। শুনেছি সরকার ১হাজার ৪০টাকা করে ধান ক্রয় করবে। এই দামে ধান বিক্রি করতে পারলে আমরা লাভবান হবো।
উদীচী কোটালীপাড়া শাখার সাধারণ সম্পাদক রতন সেন কংকন বলেন, ব্যক্তি জীবনে আমিও একজন কৃষক। আমি মনে করি আগামীতে কৃষকরা যদি রপ্তানিমুখী ধান চাষ করে তাহলে তারা অনেকটাই ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে। এ জন্য সরকারকে রপ্তানিমুখী ধান চাষে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
অপরদিকে বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমির পরিচালক কৃষিবিদ মাহামুদুলন্নবী বলেন, কৃষিক্ষেত্রে যান্ত্রিকিকরণ ও কৃষিতে ভর্তুকি বাড়াতে হবে। কৃষিতে যান্ত্রিকিকরণ ও ভর্তুকি বাড়িয়ে দিলে কৃষকদের ধান চাষসহ অন্যান্য চাষে খরচ কম হবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, কোটালীপাড়া উপজেলায় এ বছর ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আমাদের হিসেব অনুযায়ী এ উপজেলায় এ বছর ১লক্ষ ৬২হাজার মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হয়েছে। সরকারি ভাবে ধান ক্রয় ও চাহিদাকৃত ধান বাদে কৃষকদের ঘরে প্রায় ১লক্ষ মেট্রিকটন ধান মজুদ থেকে যাবে। সে ক্ষেত্রে এ এলাকায় আগামীতে অটোরাইস মিল স্থাপন করলে কৃষকরা সেই মিলে ধান সরবরাহ করে অনেকটাই আর্থিক ভাবে লাভবান হতে পারবে বলে আমি মনে করি।
© All rights reserved 2000-2023 © kalerchaka.Com
Leave a Reply