প্রতিদিন গ্রাম থেকে ৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে গিয়ে তিনি লেখাপড়া করে মাধ্যমিক পাস করেছেন। হাওর এলাকায় বাসস্থান হওয়ায় কাছাকাছি কোনো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না।
লেখাপড়ার প্রতি অসীম আগ্রহ থাকা সেই মানুষটিই আজকের ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকের পক্ষ থেকে তার সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। সে সময় নিজের জীবনে নানান বিষয়ে কথা বলেন তিনি।
এ সময় মন্ত্রী বলেন, এখনকার মানুষদের আর কষ্ট করতে হয় না, ইন্টারনেটের বদৌলতে তারা পেয়েছে গুগল। তাই জানার চেষ্টা থাকলে খুব সহজেই তারা জেনে যাচ্ছে সবকিছু- যা আমাদের সময় ছিল খুবই কষ্টসাধ্য।
তরুণদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, বয়সের কোটা বাড়িয়ে চাকরি হবে না। বর্তমানে চাকরির যেসব ক্ষেত্র রয়েছে ভবিষ্যতে ৮০ ভাগ ক্ষেত্র বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সুতরাং পেশায় টিকে থাকতে হলে ও উন্নতি করতে হলে ডিজিটাল দক্ষতা বাড়াতে হবে।
মেধাকে কাজে লাগাতে পারলে ভবিষ্যৎ পৃথিবী তোমাদের। কোনো কিছু শুরু করতে আইডিয়ার অভাব হয় না। শুধুমাত্র প্রচলিত ধারণার সঙ্গে নতুন কিছু যোগ করলেই হয়। তবে এসব আইডিয়া যেন জনগণের কল্যাণে হয় ও এ থেকে যেন আয় হয়।
অর্থাৎ আইডিয়াকে পণ্য বা সেবায় রূপান্তর করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে।
আইসিটি উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় আমাদের তরুণদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। সুতরাং, আমাদের দায়িত্ব এ মেধাবী তরুণদের সঠিক পথনির্দেশনা দেয়া।
মন্ত্রী বলেন, পরিশ্রমই সফলতার মূল চাবিকাঠি। আজকের এখানে পর্যন্ত পৌঁছতে আমাকেও অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। ৪০ কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে ক্লাস করে আবার ৪০ কিলোমিটার হেঁটে বাড়ি ফিরতাম। আমাদের সময়ে তো এত সুযোগও ছিল না।
১৯৪৯ সালের ১২ আগস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার চর চারতলা গ্রামের নানারবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন মোস্তাফা জব্বার। বাবা আব্দুল জব্বার তালুকদার পাটের ব্যবসার পাশাপাশি একজন পুরোদস্তর কৃষক ছিলেন। মা রাবেয়া খাতুন ছিলেন গৃহিণী।
দাদার প্রতিষ্ঠিত চর চারতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়াশোনার মাধ্যমে মোস্তাফা জব্বারের শিক্ষাজীবন শুরু হয়। গ্রাম থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জে এএবিসি হাইস্কুল থেকে ১৯৬৬ সালে মাধ্যমিক ও ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে উচমাধ্যমিক পাস করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে ভর্তি হন। নিয়মানুযায়ী ১৯৭১ সালে পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও মুক্তিযুদ্ধের কারণে পরে সেটি বাতিল হওয়ায় পরের বছর ১৯৭২ সালে তিনি স্নাতক পাস করেন।
এরপর তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। নিজের এ পরিশ্রমের ফল ইতিমধ্যেই ভোগ করছেন এ মন্ত্রী। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও তিনি অর্জন করেছেন নেতৃত্বের আসন।
চলতি বছরের এপ্রিলে সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি (ডব্লিউএসআইএস) সম্মেলনের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন মোস্তাফা জব্বার। বাংলাদেশের পক্ষে তিনিই প্রথম বিশ্বের এই মর্যাদাপূর্ণ সম্মেলনের সভাপতি নির্বাচিত হন।
ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখিতে পটু মোস্তাফা জব্বার রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ, সাহিত্য চর্চা, সাংবাদিকতা, নাট্য আন্দোলন- এসবের সঙ্গে ব্যাপকভাবে জড়িত ছিলেন।
১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে সাপ্তাহিক গণকণ্ঠ পত্রিকায় সাংবাদিক পেশার কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। এরপর সাপ্তাহিক থেকে পত্রিকাটি দৈনিক হয়। ৭৫’র জানুয়ারি পর্যন্ত পত্রিকাটিতে তিনি কর্মরত ছিলেন। গণকণ্ঠ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তিনি ট্রাভেল এজেন্সি, প্রকাশনাসহ কিছু ক্ষুদ্র ব্যবসায় যুক্ত হন।
© All rights reserved 2000-2023 © kalerchaka.Com
Leave a Reply