বাবা ও একটা পাঞ্জাবীর গল্প
রিয়াজ মুস্তাফিজ
বন্ধুর গার্মেন্টস দোকানে বসেছিলাম। প্রচুর ভিড়। ঈদের বাজার। কেনাবেচাও হচ্ছে খুব।
একজন বাবা এলেন। সাথে স্কুল পড়ুয়া কিশোর ছেলে। বোঝা যাচ্ছিলো, বাবা দারিদ্রের অদৃশ্য জালে আবদ্ধ।
ছেলের পছন্দ হলো একটা পাঞ্জাবী। দোকানদার বন্ধু দাম বলল। দাম সোনার পর সেই বাবার মুখ দেখে বুঝে গেলাম, সাধ্যের বাইরে। বাবা যে দাম বললেন, দোকানদার বন্ধুর সে দামে পাঞ্জাবী দেওয়া সম্ভব না।
বাবা ছেলে চলে গেলেন।
একটু পর আবার এলেন। বাবা তার আগের বলে যাওয়া দামের চেয়ে একটু বাড়ালেন। এতেও দোকানদারের পাঞ্জাবী দেওয়া সম্ভব হলোনা।
সেই বাবা ছেলে আবার চলে গেলেন।
আমি এখনো দোকানেই বসে আছি। কেনাবেচার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গরম। আমি ঘামছি দরদর করে। বুকটাও ভারি হতে শুরু করেছে আমার।
বন্ধুটিকে বললাম, লাভ না করে পাঞ্জাবীটা দিয়ে দে।
বাবা কিশোর ছেলেটাকে নিয়ে আবার এলেন…..
আরেকটু দাম বাড়িয়ে দিলেন। ভারি কষ্ট চেপে বললেন, আর দিতে পারবো না।
এবার আর বন্ধুটি লাভ লোকশানের হিসেব করল না।
পাঞ্জাবীটা প্যাকেট করে ছেলেটার হাতে দিয়ে দিলো।
ছেলেটা এই চকচকে পাঞ্জাবী পরে ঈদগাহে যাবে। ঈদের নামাজ পড়বে। কোলাকুলি করবে। বন্ধুদের সাথে বেড়াবে।
ঐ বাবার পাঞ্জাবীর দরদামের গল্প কেউ জানবে না। হয়তো বাবার গায়ে কোন নতুন পাঞ্জাবী থাকবেনা। ছেলের গায়ের নতুন পাঞ্জাবীর গন্ধে বাবা তৃপ্তির নিঃশ্বাস নেবেন।
এ ভাবেই আমাদের আশে পাশের কিছু বাবারা ঈদ করেন। বছরের পর বছর।
বাবাদের গায়ের পাঞ্জাবীর খবর হয়তো কেউ রাখি, হয়তো কেউ রাখিনা।
© All rights reserved 2000-2025 © kalerchaka.Com
Leave a Reply