বিক্রি হয় বাবুই পাখি ?
হাসিব আল মামুন
সেই শৈশবে পড়া চিরায়ত কবিতাটি এখনো মনের মাঝে জাগিয়ে তোলে অনেক মধুর স্মৃতি। “বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুড়ে ঘরে থেকে করো শিল্পের বড়াই, আমি থাকি মহা সুখে অট্টালিকার পরে, তুমি কতো কষ্ট পাও রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে। বাবুই হাসিয়া কহে সন্দেহ কি তাই, কষ্ট হোক তবু থাকি নিজের বাসায়।
বাবুই শুধু নির্মাণ শিল্পি নয়, পাখিদের মধ্যে সবচেয়ে রোমান্টিক পাখি। রোমান্সে অন্য কোনো পাখি বাবুই পাখির সঙ্গে পারে না। পুরুষ বাবুই যৌবন ধরে রাখতে পারে অনেক দিন। স্ত্রী বাবুই’কে পেতে কি-ই না করে। প্রথমে গান গেয়ে আকর্ষনের চেষ্টা করে। তার পর দক্ষতা দেখাতে অর্ধেক বাসা বুনে স্ত্রী বাবুই’কে ডেকে আনে। স্ত্রী বাবুই’র বাসা পছন্দ হলে আনন্দে ভালোবাসার গান গেয়ে ৭ থেকে ১০ দিনে বাসা তৈরী করে। এক মৌসুমে বাবুই ৬/৭ টি বাসা বুনতে পারে আর বাসা মানে ৬/৭ সঙ্গী /প্রেমিকা। সাহেবের হ্যাটের মত আধা সমাপ্ত বাসা দেখলে বুঝতে হবে ওই সব বাবুই সঙ্গী /প্রেমিকা পায় নি। টেবিল ল্যাম্প বা হারিকেনের চিমনির মতো বাসা দেখলে ধরে নিতে হবে তা পরিপূর্ণ।
সুখের ছোট একটি নীড় বানিয়েও হারাতে হয় বাবুই’র। তবু মৌসুমে সেই বাসা বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তারা। ঝাঁক বেঁধে নামে ফসলের মাঠে। অতীতে ওরা মাঠে নামতে ভয় পেতনা। এখন বড্ড ভয় পায়। শিকারির জালে ধরা পড়লে নিশ্চিত মৃত্যু। বাসা বানানোর সাধ গিয়ে পড়বে রান্নাঘরে, সেখান থেকে খাবার টেবিলে।
একদা যে বাবুই পাখির গড়া নিপুন শিল্পে বুননো বাসা তাল গাছ বা উুঁচু কোনো গাছে দেখা যেত, এখন আর তেমনটি চোখে পড়ে না। ছোট এই পাখির বাসা আজ বেশ দামে বিক্রি হচ্ছে। বিদেশেও যাচ্ছে। প্রকৃতির এই শোভা মানুষের নিষ্ঠুর প্রবৃত্তির হাত থেকে রেহায় পায়নি।
© All rights reserved 2000-2023 © kalerchaka.Com
Leave a Reply