জাহাঙ্গীর আলমঃ- বোয়ালমারী জিম ক্লাবে বসে আছি। হঠাৎ সালথা উপজেলার বাহিরদিয়া এলাকার জনৈক ব্যাক্তি ক্যাব সভাপতি মহব্বত চৌধুরী ভাইয়ের কাছে ফোন দেয়, ঘটনা যতদুর আচ করতে পারি, লোকটির গরু চুরি হয়ে গেছে, লোকটির ধারনা তার গরুটি চোরেরা বোয়ালমারী হাটে নিয়ে এসেছে। আজ রবিবার বোয়ালমারী হাটবার। ধারনাটা সত্যও হতে পারে ভেবেই মহব্বত ভাই গোহাটার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন, প্রথমে নিষেধ করেছিলাম, কারন কার গরু, কে চুরি করেছে, আদৌ এই গরু হাটে পাওয়া যাবে কিনা, এটা নিয়ে সংশয় থাকাটাই স্বাভাবিক। অযথা ঝামেলা বাড়াতে চাইনি। কিন্তু মহব্বত চৌধুরী নাছোড় বান্দা। যতদিন তার সাথে মিশেছি, খুব কাছ থেকেই দেখেছি,ভাল কাজে সফল হওয়ার জন্য তার ভেতরে প্রচন্ড জিদ কাজ করে। আমাকে প্রচন্ড ভাল বাসলেও অন্তত এখন তিনি আমার কথা রাখবে না তা বোঝা যাচ্ছে। এক প্রকার অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার পিছু নিলাম।
এর মাঝে যার গরু চুরি হয়েছে তিনিও গরুর সন্ধানে বোয়ালমারী গোহাটায় হাজির। তাকে নিয়েই গরু খুজতে লাগলাম, আমার সমস্ত ধারনা মিথ্যে হয়ে গেল। গরু পাওয়া গিয়েছে, তবে একটু দেরী হয়ে গেছে, ইতিমধ্যেই চোরেরা গরুটাকে ঝিনাইদহের এক ব্যাপারীর কাছে বিক্রি করে দিয়ে চম্পট দিয়েছে। ওই ব্যাপারী কোন মতেই গরু ফেরত দিতে রাজি নয়। আর দেবেই বা কেন, তিনিতো ন্যায্য পন্থায়ই গরুটা কিনেছেন। ভেবেছিলাম এই গরু আর তার মালিককে ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব না। কিন্ত মহব্বত চৌধুরী দমে যাবার পাত্র নয়। গরুর আসল মালিককে নিয়ে চলে এলেন হাসিল ঘরে। কাগজপত্র ঘেটে বুঝতে পারলাম কিছুক্ষন আগে এই গরু বিক্রি করেছে খারদিয়া গ্রামের এনায়েত, পেশায় তিনি একজন কসাই হলেও গরু চোর চক্রের সাথে তার দির্ঘদিনের ওঠাবসা।
বিভিন্ন স্থানে ফোন দিয়ে এনায়েতের ফোন নাম্বার যোগাড় করা হলো, তার সাথে কথোকপনে জানা গেল বাহিরদিয়ার আর এক চোরের মাধ্যমে গরুটি পেয়েছে সে। গরু বিক্রির টাকা ফেরত চেয়ে একপ্রকার বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে গেল ক্যাব সভাপতি। চোরের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে খুব একটা কাজ হলো না। সে মনে করেছে বোয়ালমারী ক্যাব সভাপতির ক্ষমতা বোয়ালমারীতেই সীমাবদ্ধ। সালথা থানার সমস্যা মোকাবেলা করা ক্যাবের দ্বারা অসম্ভব। কিন্ত না, সভাপতি এই বিষয়টাকে কোন মতেই ছাড় দিতে নারাজ। সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করা হলো, তিনি একজন এস আইয়ের মাধ্যমে চোরের নাম্বারে ফোন দিলেন, এবার চোর বেটার টনক নড়ে গেছে, তিনি এখন সভাপতির কাছে মাফ চেয়ে টাকা ফেরত দিতে রাজি হলেন,আর আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম গরুর ব্যাপারীকে টাকা ফেরত দিয়ে গরুটি মুল মালিকের কাছে ফেরত দিব। কিন্তু এরই মাঝে পিক আপ থেকে গরুটি সরিয়ে ফেলেছে ক্রেতার লোকজন।
আমরা দারস্থ হলাম বোয়ালমারী থানা পুলিশের। মহব্বত জান চৌধুরীর চৌকষ মেধা এবং সাহসীকতায় কোন এক নেতার বাড়ি থেকে গরুটি ফিরিয়ে এনে মালিকের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হল হাটের লোকজন। অচেনা অজানা মানুষটি মহব্বত চৌধুরীর সহায়তায় তার গরু হাতে পেয়ে আনন্দে চোখের কোনে পানি চলে এসেছিল। আর এখানেই ব্যাপক স্বার্থকতা খুজে পাওয়া যায়, লাখ টাকায় যে তৃপ্তি না আসে এইটুকু ঘটনা তার থেকে অনেক বড় তৃপ্তির।এই ঘটনা যখন দেখছি ঠিক
তখনই মনে পড়ে গেল আমার বোয়ালমারীর কোন এক ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের কথা, ওনার ইউনিয়নের একটি মেয়েকে দাদপুরের একটি ছেলে প্রতারনার মাধ্যমে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দেয়না, চেয়ারম্যানের কাছে সাহায্যের জন্যে গেলে তিনি বলেছিলেন অন্য ইউনিয়নের শালিশ করার ক্ষমতা আমার নেই!! ” আজ বুঝলাম চেয়ারম্যানের ক্ষমতার অভাব ছিল না, অভাব ছিল ইচ্ছার। ক্যাব সভাপতি মহব্বত চৌধুরীর মানুষের কল্যানে এগিয়ে আসার মত ইচ্ছার অভাব নেই বলেই হয়তো দুঃসাধ্যের অসংখ্য কাজকে সম্ভব করে দেখিয়েছে। এই বোয়ালমারীতে প্রতিনিয়ত, পদে পদে মানুষ লাঞ্ছিত হয়, প্রতারিত হয়,বড় বড় কর্তা ব্যাক্তির সামান্য চোখের ইশারায়ই মজলুমদের ন্যায় বিচার পাওয়া সম্ভব।অথচ কেউ কোনদিন কারো ঝামেলায় নিজ থেকে এগিয়ে আসেনা।
ক্যাব সভাপতির মত বেশীরভাগ সভাপতিরা যদি সত্যিই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতো তাহলে আমরাও দেশের বুকে মাথা উচু করে দাড়াতাম।
সাংবাদিক নাম শুনে যারা নাক সিটকান, তারা মহব্বত চৌধুরীর মত বঙ্গ টিভির আঞ্চলিক প্রতিনিধি, দৈনিক ভোরের পাতার থানা প্রতিনিধির এসব কার্যক্রমকে বিচার করতে পারেন। তাহলেই হয়তো আপনা আপনিই বুঝবেন সত্য সুন্দরের আর অসত্য অমানুষের তফাৎ।আসুন না দুর থেকে না জেনে সমালোচনায় নয়, কাছ থেকে মানবিকতার বিচারে আমরা সত্য তুলে ধরতে সচেষ্ট হই। প্রতি ঘরেই যেন একজন করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার মানুষ তৈরী হয়, এই কামনায়।
© All rights reserved 2000-2025 © kalerchaka.Com
Leave a Reply