ছাত্রলীগ-যুবলীগের লিলিপুটিয়ান চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে । চলুক । সাগরসম ব্যাংক-শেয়ারবাজার-প্রকল্প লুটেরা, বিদেশে অর্থ পাচারকারী ও দুর্নীতিবাজ রাঘব বোয়ালরা ধরাছোঁয়ার উর্দ্ধে থাকলে এ অভিযান তামাশা বলেই পরিগণিত হবে । দেশের স্বাধীনতার সূর্যসন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধারা অনাদরে অবহেলায় অসম্মানের মধ্যে মানবেতর জীবনযাপন করছেন, অথচ তাদেরই সীমাহীন শৌর্য বীর্য ত্যাগ ও বীরত্বে অর্জিত স্বাধীন দেশে গুটিকতক রাজনৈতিক টাউট, দুর্নীতিবাজ চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী লুটেরা দুর্বৃত্ত সেই দেশের অর্থ ও সম্পদ গোগ্রাসে চেটেপুটে ও লুটেপুটে খাবে, তা হতেই পারে না । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামের ওপর কলঙ্ক লেপনকারী আশি/পঁচাশি হাজার অমুক্তিযোদ্ধা, এমনকি রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধা সেজে ফ্রি-স্টাইলে রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা গোগ্রাসে গিলে খাচ্ছে । এদেরকেও জাতীয় দুর্বৃত্ত হিশেবে গণ্য করতে হবে । মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অঙ্গীকার নিয়ে সমাজ ও দেশবিরোধী সর্বস্তরের এসব চাটার দলকে সমূলে উৎপাটিত করতেই হবে । এটাই কোটি কোটি মানুষের দাবি । সময়ের দাবি ।
বঙ্গবন্ধু-কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তো অনেক আগেই বলে দিয়েছেন, শেখ রেহানা ছাড়া তাঁর আর কোনো আত্মীয় নেই ! এটাই বঙ্গপিতার সাহসী সন্তানের সাহসী উচ্চারণ । অথচ তাঁর সরকার ও দলের সাথে জড়িত একটি শক্তিশালী চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী দুর্নীতিবাজ-লুটেরাচক্র গড়ে উঠেছে এবং তাদের যাবতীয় অন্যায় ও অপরাধের দায়ভার তাঁকেই বহন করতে হচ্ছে বলে বিলম্বে হলেও তিনি এখন বুঝতে পারছেন । আর বুঝতে পারছেন বলেই তিনি তাদের বিরুদ্ধে বেশ কিছুদিন ধরে নানান উপদেশ-অনুরোধ, এমনকি ধর্মের রেফারেন্স দিয়ে বুঝিয়ে আসছিলেন । কিন্তু কথায় আছে না, চোরা শোনে না ধর্মের কাহিনী ? চক্রটি তাঁর কথায় কর্ণপাত করেছে—-এমন কোনো প্রমাণ নেই । প্রায় প্রতিদিনই ভয়াবহ সব লুটপাট দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির খবরাখবর বেরিয়ে আসছে । সচেতন জনগণ এজন্য সরকারের অযোগ্যতা অদক্ষতা অক্ষমতা ও অদূরদর্শিতাকে দুষছেন—- এমনকি এসব অপরাধীদের পৃষ্ঠপোষক ও প্রশ্রয়দাতা হিশেবে সরকারের দিকেই আঙুল তুলছেন ! ফলে সাধারণ জনগণের আস্থাশীল নেতা হিশেবে দায়িত্ববোধের স্থান থেকে, দেশ ও জাতিকে ঐসব সমাজ ও দেশবিরোধী দুর্নীতিবাজ লুটেরা অপশক্তির কবল থেকে রক্ষা করার পাশাপাশি দেশকে সমৃদ্ধশীল ন্যায়ভিত্তিক একটি সমাজ-রাষ্ট্রিক অবকাঠামোর ওপর দাঁড় করানোর লক্ষ্যে তাঁকে কঠিন ও কঠোর হতে হচ্ছে । ছাত্র ও যুবলীগের ভেতর শুদ্ধি অভিযান শুরুর মধ্য দিয়ে তিনি সম্ভবত: সেই বার্তাটি দিতে চাচ্ছেন । ইতিমধ্যে তিনি এও বলেছেন, তিনি সব হারিয়েছেন, তাঁর আর হারাবার কিছুই নেই—-তিনি জনগণের সেবক হিশেবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এদেশকে গড়ে তুলতে চান ।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের দায়িত্বশীল শাসক ও জনগণের আস্থাভাজন নেতা হিশেবে তাঁকে অবশ্যই কঠিন ও কঠোর হতেই হবে । এ প্রক্রিয়ায় দেশের সাধারণ মানুষ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, বিশেষ করে সব প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক সমর্থন ও সহযোগিতা তিনি পাবেন ।
দুর্বৃত্তবিরোধী অভিযান চলছে । চলতেই থাকুক । কোনো আপোস ও গাফিলতি চলবে না । দল ও স্বজনপ্রীতি চলবে না । ষোলো কোটি মানুষের আর্থসামাজিক কল্যাণ ও শান্তির লক্ষ্যে কয়েক হাজার দুর্বৃত্তকে ফেলে দিলে কিছুই যায় আসে না । মনে রাখতে হবে, এটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লক্ষ মানুষের পবিত্র রক্তেভেজা বাংলাদেশ । মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ । মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে টাউট বাটপাঢ় দুর্নীতিবাজ চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী লুটেরা ধর্মব্যবসায়ী ও স্বাধীনতাবিরোধীরা অপবিত্র করছে, দেশটাকে তারা তাদের অভয়ারণ্যে পরিণত করছে ! কঠিন ও কঠোরতার মধ্য দিয়ে তাদের চিরদিনের মতো বুঝিয়ে দিতে হবে যে, এটা মানবের দেশ, দানবের নয় । তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে যে : বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি, বুঝে নিক দুর্বৃত্ত—-
আবীর আহাদ
সভাপতি,
একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ
© All rights reserved 2000-2025 © kalerchaka.Com
Leave a Reply