বঙ্গবন্ধুর পুণ্যভূমি গোপালগঞ্জ। তাঁরই নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় খুব গর্বিত হয়েছিলাম । দ্বিতীয় ভিসি হিশেবে অধ্যাপক খন্দকার নাসিরউদ্দিনকে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগ দেয়ায় যারপরনাই হতাশ হয়েছিলাম। কারণ আমাদের এলাকার লোক হিশেবে তাকে কমবেশি জানতাম। তিনি তার জীবন শুরু করেছিলেন বিএনপি-জামায়াতের আদর্শ দিয়ে। সেই লোক কেমন করে বঙ্গবন্ধুর পবিত্র নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর হলেন এবং কে বা কারা তাকে ঐ পবিত্র পদে নিয়োগ দেয়ার ব্যাপারে সুপারিশ করেছেন, তা ভাবতেই পারিনি !
এদেশে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সরকারের বড়ো বড়ো লোভনীয় পদে লোক নিয়োগের পশ্চাতে নানামুখী তদবির হয়ে থাকে। তবে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের উচিত, এধরনের ব্যক্তিদের সম্পর্কে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা ও অন্যান্য সূত্রে তাদের সার্বিক যোগ্যতা বিষয়ে প্রয়োজনীয় তদন্ত করে দেখা যে, কে কেমন কোন আদর্শের লোক। অধ্যাপক খন্দকার নাসিরউদ্দিনের ব্যাপারে সে-ধরনের কোনো তদন্ত হয়েছে বলে মনে হয় না। তদন্ত হলে অবশ্যই তিনি বাদ পড়ে যেতেন। কারণ ভিসি, বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হওয়ার মতো যোগ্যতা ও আদর্শবান ব্যক্তি তিনি নন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ছিলেন বিএনপি ঘরানার সোনালি দলের উচ্চপর্যায়ের ছাত্রনেতা—যে দলটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপহ্নী, যে দলের মধ্যে কোনোভাবেই কোনো ভালো মানুষের সন্ধান পাওয়া ভার। সেই দলের একজন কট্টর সমর্থক কী করে বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হতে পারে, তা ভাবাই যায় না ! তবু তাকেই ভিসি করা হয়েছে ! যে বা যারা তাকে এখানে বসিয়েছেন, তারা এখন নিশ্চয়ই টের পাচ্ছেন, কী মহা ভুলটি তারা করেছেন। অথবা তারা তা মনে না-ও করতে পারেন। কারণ খন্দকার নাসিরউদ্দিনকে ভিসি করার পশ্চাতে কেউ না কেউ তো লাভবান হয়েছিলেন !
আজকে কী দেখছি ! সব ধরনের অন্যায় অপরাধ অপকর্ম অনৈতিকতা ও দুষ্কর্মের সাথে তিনি জড়িত ! তার অতীত অপরাজনৈতিক মানস-চেতনায় তিনি আজ দুষ্টগ্রহ হিশেবে আবির্ভূত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রামী ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনকে অবদমিত করে, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের চেয়ারটি আঁকড়ে ধরে রাখার জন্য হেন কোনো পন্থা নেই যা তিনি ব্যবহার করছেন না ! গোপালগঞ্জের ঐতিহাসিক ঐতিহ্য ও শান্ত পরিবেশকে তিনি ব্যক্তিস্বার্থে পদদলিত করছেন। তবে দিনের শেষে তার কোনো অপচেষ্টা সার্থক হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে আমি মনে করি।
একজন মুক্তিযোদ্ধা হিশেবে আমি ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনের প্রতি দ্যর্থহীন সমর্থন ও সংহতি প্রকাশ করছি। এর পাশাপাশি অধ্যাপক নাসিরউদ্দিনকে বলছি : আপনি সসম্মানে ইস্তফা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর পুণ্যভূমিতে তাঁরই নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্রতা রক্ষা করুন। অন্যথায় আপনার পরিণতি শুভ হবে বলে মনে হয় না।
——-আবীর আহাদ
মুক্তিযোদ্ধা লেখক গবেষক
© All rights reserved 2000-2025 © kalerchaka.Com
Leave a Reply