নীল কষ্টের হাট
—–রিয়াজ মুস্তাফিজ
কষ্টরা আমাকে অনেক বেশিই ভালোবাসে। আমি ওদের ভুলে ভুলে যাই। এড়িয়ে চলি কদাচিৎ। এত্ত কিছুর পরেও ওরা আমাকে ছেড়ে যায় না। প্রবল প্রতিরোধ সত্ত্বেও আমাতেই আঘাতের হানা আমার দিকেই ছুড়ে মারে।
নীল জোৎস্নাও আমাকে নিত্য পোড়ায়।
আমারো সয়ে গেছে, প্রতিবাদের ভাষারা লুটোপুটি খায় স্বরযন্ত্রে। তাও নিজেকে কিছু বলতে ইচ্ছে হয়না। হতাশ হয়ে অসহায়ত্বের কাছে সপে দেয়নি নিজেকে। নতুন স্বপ্নের ঘর বুনেছি ছনের ঘরে বাঁশের বেড়া দিয়ে। তবুও কষ্টরা নিভৃতে আসে, ঘুরে ফিরে আর মরতে বসা ঘাঁ তাজা করে দিয়ে যায়।
নিয়তির স্ট্যাম্পে বন্ড সই করেছি; তো ওর যা ইচ্ছা করে দেখাক। আমার কিইবা করার আছে? ক্ষমতা গুলোকে নাইলনের শক্ত সুতোয় বেঁধে রেখেছি নিয়তির দপ্তরে!
তবে নিজের অজান্তে একটা কাজ করে চলেছি অবিরত। আর তা হল, কষ্ট সইবার এন্টিবায়োটিক নিচ্ছি মনের শরীরে। কষ্ট আবার একদম সহ্য হয়না ওর। ৬ষ্ঠ ইন্দ্রীয় মাঝে মধ্যে গুতো মেরে বলে যায়… এখানেই শেষ নয়। হাজারো রংয়ের কষ্টরা বসে থাকে কষ্টের হাটে। বিনে পয়সায় কষ্ট বিকোয় দোকানিরা! আমি কিনতে না চাইলেও আমার পিছু নেয় ওরা। নিঃশব্দে হেটে আসে আমার ছায়ার সাথে।
অন্তরে জমে থাকা নীল কষ্টরা সান্তনার বেড়ী ভেঙ্গে যখন বন্যার স্রোতে আমার বুক ভাসায়, আমি তখন হারানো সুখ ফিরে পাই। কিঞ্চিৎ সুখ আদরের আলতো পরশ বুরিয়ে যায় আমার কপালে।
আমি কষ্ট খুঁজি, কষ্ট জলে অথই ভিজি।
কষ্টের শোকেসে সাজানো বিবর্ণ কষ্ট গুলোকে ধামাচাপা দেয় নতুন কষ্টরা। আমি নবাগতদের অভ্যর্থনা জানাই অপরাজিতার ডালা বিছিয়ে। আবার অপেক্ষায় থাকি কষ্টরা আসবে। আমার নড়বড়ে দরজায় কড়া নাড়বে। আমি সহাস্যে খিড়কি খুলতেই ব্যঙ্গর হাসি হেসে ওরা বলবে “কষ্টের হাটে আপনাকে স্বাগতম!!”
হৃদয় নামের বায়বীয় জায়গাটা নীল রংয়ের মোটা পলেস্তারা পড়েছে। কলিজার উত্তাপে গলতে শুরু করে আস্তরন কখনো কখনো। তখনি ঘটে বিপত্তি। কষ্টের নীলেরা রক্তে ঢুকে পড়ে। এরপর শিরা উপশিরায়। ধমনী বেয়ে বেয়ে মাংস কোষে। অতঃপর আমি নীলাভ হয়ে যাই। ঠিক সাপের বিষে জর্জরিত রোগীর মত। ছটফট করি লাল হয়ে ওঠে চোখ। আমি আসক্ত হয়ে পড়ি নীল বেদনায়!
আচ্ছা, কষ্ট দিয়ে কি নেশা করা যায়?
© All rights reserved 2000-2025 © kalerchaka.Com
Leave a Reply