“সার্টিবেট দিয়ে কি অবি?
দ্যাশের জন্যি যুদ্ধে গেছিলাম
দরকার অলি আবার যাবো”
আমার বাবা মরহুম জয়েনউদ্দীন মোল্যা। ১৯৭১ এর একজন কিশোর যোদ্ধা। পশ্চিমা হায়েনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বাড়ি ছেড়েছিলেন। সামান্য চিড়া, গুড় পুটলাতে বেধে রওয়ানা দেন। সাথে সমবয়সী আরো কয়েকজন কিশোর। তাদের মধ্যে জিন্না, সামচেল, ও পথের অপরিচিত আরো কয়েকজন। অঘোষিত একটি দল তৈরী হয়ে যায় এ সময়। এ দলের নেতৃত্বে ছিলেন আমার সে সময়ের কিশোর বাবা। কখনো পায়ে হেটে, কখনোবা নৌকায় করে এগোচ্ছিল মুক্তিকামীর এই ছোট্ট দল।
রাজাকারের ধাওয়া, মিলিটারির গুলি কোন কিছুতেই দমছে না কিশোরের দল। দিনে পাট ক্ষেতে বা কোন জংগলে আত্বগোপনে থাকতো, রাতে গোপনে গোপনে ভারতের পথে পা বাড়াতো তারা।
পাকিদের গুলি শুরু হলেই গোরস্থানের ভাঙ্গা কবরে মৃত লাশের মত পড়ে থাকতো এই কিশোর মুক্তিকামির দল।
এভাবেই তারা পৌছে যায় ভারতে। কল্যানী ট্রেনিং ক্যাম্পে প্রশিক্ষন শুরু হয় তাদের। অদম্য মনোবল ও দেশ স্বাধীনের বাসনা বুকে নিয়ে সফল ভাবে প্রশিক্ষণ শেষ হয়ে যায়।
এখন হায়ার ট্রেনিং এর অপেক্ষা।
এসে যায় ডিসেম্বর। কল্যাণী ক্যাম্পে থাকা অবস্থায়ই সুখবর শুনতে পায় কিশোর দলটি। তাদের ফিল্ডে গিয়ে যুদ্ধ করার আগেই শত্রু মুক্ত হয় বাংলা। নতুন সূর্য দেখতে ভারত থেকে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে প্রবেশ করে তারা। নকশালের ভয়ে ছাড়পত্র ছিড়ে ফেলে শরনার্থী সেজে দেশে আসে কিশোর মু্ক্তিকামি এ দলটি।
মহান মুক্তিযুদ্ধের ৪৪ বছর পরে এসে দেখলাম। দলটির অনেক সদস্যই চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তাঁদের কেউই পাননি মুক্তিযোদ্ধা সনদ, মৃতদেহে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা কিংবা কোন প্রকার সংবর্ধনা।
যখনই যুদ্ধের কথা উঠতো, বাবা কেমন যেন হয়ে যেতেন। কণ্ঠ আড়ষ্ট হয়ে উঠতো। চোখ ভারী ভারী হয়ে পড়তো। স্পষ্ট দেখেছি বাবার রোম দাড়িয়ে গেছে গল্প বলার সময়।
২০০৯ সালে আমার বাবাও চলে গেছেন পৃথিবী ছেড়ে। বাবার জীবদ্দসায় যখনি প্রশ্ন করতাম মুক্তিযুদ্ধ সনদ নিয়ে।
মৃদুহেসে বাবা একটাই উত্তর দিতেন—
সার্টিবেট দিয়ে কি অবি? দরকার অলি আবার যাবো।
© All rights reserved 2000-2023 © kalerchaka.Com
Leave a Reply