রিয়াজ মুস্তাফিজ :
“বাস চালক ও অপূর্ন ইচ্ছে গুলো
শৈশবে বাসের ড্রাইভার হতে চেয়েছিল রাহাত। বারাশিয়া পাড়ের মামা বাড়ির, আম গাছতলায় দাড়িয়ে সে দেখতো দূরের রাস্তার বাসের যাওয়া আসা। হরেন বাঁজিয়ে থানা শহর থেকে জেলার উদ্দেশ্যে ছুটে যেত বাস গুলো। শুধু মামা বাড়ি গেলেই একটু আধটু বাসের দেখা মিলতো। কত্ত বড় গাড়ি। কত্ত মানুষ ভরে থাকতো বাসের পেটে।
প্রাইমারীর পাশে বাওড় থাকায় যখন তখন স্কুল পালিয়ে স্বচ্ছ জলে নেমে পড়তো রাহাত। কাজ একটাই শাপলা, শালুক তুলে বাড়ি ফেরা। অনায়াসে জানালার ফাঁক দিয়ে স্কুল পালাতো ওরা। পাড়ার বাগানে কাঁচবল, গুল লাঠি খেলে বিকালে বাড়ি ফিরত রাহাতের দলবল। খেয়ে দেয়ে আবার টায়ার নিয়ে বড় রাস্তার দিক ছুটে চলা ওদের নিত্য রুটিন।
আকাশের অসীমতার মতই, রাহাতের শৈশবের দিনগুলো ছিল বাঁধাহীন। অন্য ছেলেদের মতই রাহাতও ঘুড়ি বানাতো। কিন্তু কেন যেন ওর ঘুড়ি পাক খেতো আকাশময়।
রাহাতের বাবার ইচ্ছে ছিল অনেক লেখাপড়া শেখানোর। শিখেছে, তবে ছক বাধা শিক্ষা! এ দিয়ে বেশি টাকা কামাই করা যায়না।
রাহাত হাই স্কুলে গেলো। একটু একটু বড় হতে লাগল। শৈশবের ইচ্ছেগুলো কৈশোরে হারাতে থাকলো। হাতের টায়ার ছেড়ে ক্রিকেটের ব্যাট ধরল রাহাত। তখন হতে শিখলো হাবিবুল বাশার, আশরাফুল, মোঃ রফিক।
ক্লাস নাইন এ বিজ্ঞান বিভাগ নিল রাহাত। এবার আর ক্রিকেটার হওয়ার ইচ্ছে রইলো না। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারের বাসনা ঘুরতে লাগলো ছেলেটার আশেপাশে।
ইন্টারমিডিয়েটে সাইন্স ছাড়ল রাহাত। অংকে দূর্বল। কলেজের মঞ্চে টুকটাক অভিনয় শুরু করলো এবার অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছে উস্কে দিল তাকে । চলতে থাকলো এভাবেই।
হঠাৎ রাহাতের বাবা চলে গেলেন। তার কিছু হওয়াই দেখতে পারলেন না। এর পর বড় ভাই কাঁধে মমতার হাত রেখে এগিয়ে নিলেন। উচ্চ শিক্ষা শেষ হলো।
ক্রিকেটার,ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার হতে পারেনি সে । তো কি হয়েছে? বড় চাকরে হবে। টাকা হবে,বাড়ি হবে,গাড়ি হবে!!
অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছেটা তার উবে যাইনি এখনো। রেখে দিয়েছে মনের গহীনে।
তবে চাকরির পাশাপাশি।
খালি পেটে সাহিত্য চলেনা!
সরকারী চাকরি হীরের হরিন। কোম্পানী সোনার। হাট বাজারের বড় মাছের দরদামের মতই সরকারী চাকরির বাজার। সকল যোগ্যতা থাকা স্বত্ত্বেও ১০/১৫ লাখ। তাও আবার ছাপোষা কেরানীর পোষ্ট!!
ঘুষ দিয়ে চাকরি করবে না রাহাত। তাছাড়া অত টাকা দেবে কোত্থেকে?
তার চেয়ে বরং কোম্পানীর পাছে দৌড়াক, সেই ভালো ।
পরিশ্রম করে ভাগ্য বদলানো যায়। শুরু হলো সিভি ছাপানোর দৌড়। এবার জমা দেওয়ার পালা। জমা শুধু দিয়েই যাচ্ছে।
এখানে……ওখানে…… সবখানে……একটার পর একটা।
যদিওবা দু একটা সুযোগ আসে তাও আবার হাজার কন্ডিশন। সার্টিফিকের মূল কপি জমা, সিকিউরিটি মানি, রেফারেন্স, কম বেতন, ছুটিহীন আরো কত কি?
এখন রঙিন সপ্ন আর রঙিন নেই তার। রং হারিয়ে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। কিছু সপ্ন বাস্তব হওয়ার আগেই ঝরে গেছে, ঝরা ফুল হয়ে!
জীবনের হিসাব কৈশোরের না মেলা অংকের দূর্বলতার মতই মনে হয় রাহাতের । জীবনের বাঁকে বাঁকে পাক খায় জীবন ঘুড়ি।
রাহাতের ইদানিং বড্ড বেশি “বাসের ড্রাইভার” হতে ইচ্ছে করে।
কারন বাস চালাতে এম এ পাশ করা লাগেনা!
© All rights reserved 2000-2023 © kalerchaka.Com
Leave a Reply