পাড়ার পশ্চিম কোল ঘেঁসে বিশাল একখন্ড পতিত জমি। জমিটার আলাদা একটা নাম আছে “ছনের ভুই” কে বা কারা জমিটার নাম ছনের ভুই রেখেছিলো জানি না।
তবে ছনের ভুই আমাদের জন্য ছিলো মিলনায়তন। বিকেল হলে আমরা সবাই ছুঁটে আসতাম ছোনের ভুইতে এখানে চলতো ভিন্ন ভিন্ন দলে ভাগ হয়ে নানান ধরণের খেলা। যেমনঃ গোল্লাছুট, কানামাছি, দাড়িয়াবান্ধা, বৌচি, কুতকুত, সাতচাড়া, ডাংগুলি, রুমালচুরি, ওপেন্টি বাইস্কোপ, নুনতা খেলা, মোরগ লড়াই, বাঘ ছাগল খেলা, গোশত তোলা, মার্বেল খেলা, লাটিমসম সহ আরো কত্ত কি। এসব খেলা ছাড়া আমাদের একটা আকর্ষনীয় খেলা ছিল যেটা আমরা প্রায়ই খেলতাম তবে মার্চ এবং ডিসেম্বর মাসে বেশি খেলা হতো সেটা হলো মুক্তিযোদ্ধা এবং মিলিটারি খেলা, এই খেলার মাধ্যমে আমরা মুক্তিযুদ্ধ চলা কালের কিছু চিত্র নিজেরা ফুটিয়ে তুলতাম। মুক্তিযুদ্ধের গল্পগুলো আমরা গ্রামের মুরব্বিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতাম।
এইভাবে চলতো বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের রঙ বে রঙের খেলা। কতটা না উপভোগ করতা, আনন্দ পেতাম ক্লান্তহীন বিকেল কাটাতাম।
ফিরে পেতে ইচ্ছে হয় সেইসব বিকেল কাটানো ছোটবেলার খেলার সাথীদের। কিন্তু তা তো হওয়ার নয়। সময়ের স্রোত অতীত ফিরিয়ে দেয় না কখোনই।
শত বিকেল কাটানো ছনের ভুইয়ের কাছে এখনো দাঁড়াই। চোখের সামনে ছায়া হয়ে ভাসে, খেলাগুলো, গোল্লাছুট, কানামাছি, সাতচাড়া, দাড়িয়াবান্ধা আর আমাদের সেই আকর্ষনীয় মুক্তিযোদ্ধা এবং মিলিটারি খেলা।
কচি গলায় চিল্লাচিল্লি বাজে কানের দু পাশে। ওদের আওয়াজ ধরা যায় না, ছোয়া যায়না। অনুভব করা যায়, ভেজা চোখে, ভারী বুকে।
স্মৃতি ভান্ডারে এমন হাজারো স্মৃতি হাতড়ে বেড়াতে বেড়াতে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ি। এ যেন এক অন্য জগত, বুকের ভিতরে লুকিয়ে রাখা আরেকটি স্বপ্ন জগত। যেখানে আরেকটি বার ফিরে যাওয়ার ব্যাকুল আকুতি, চাইলে কি সব সম্ভব?
© All rights reserved 2000-2025 © kalerchaka.Com
Leave a Reply