মো:শাহাদাৎ হোসেন রাজু :
দেশ-বিদেশের শতাধিক বাউল সাধকদের পদচারণায় মুখোর হয়ে উঠেছে নরসিংদী বাউল মেলা। আত্মশুদ্ধি আর আত্বমুক্তির লক্ষ্যে বাউলদের কীর্তন, গীতা পাঠসহ ধর্মী আচার- অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সরব হয়ে উঠেছে আখড়াধাম।
নরসিংদী শহরের কাউরিয়া পাড়ায় মেঘনা নদীর তীরে বাউল আখড়াধামে গত রবিবার রাতে প্রথম বাতির মধ্য দিয়ে প্রায় ৭০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ মেলা শুরু হয়। এরই মধ্যে দেশ বিদেশের শতাধিক বাউলরা সমবেত হয়েছেন ।
সোমবার সন্ধ্যায় সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, মেলা উপলক্ষে মেঘনার পাড়ে শিশুদের হরেক রকমের খেলনা, খাবারসহ বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাঝিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা।
সপ্তাহব্যাপী এই মেলা চলবে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত।
বাউল ঠাকুরের আখড়াবাড়ি সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৭০০ বছর ধরে চলে আসছে এই বাউল উৎসব। কথিত আছে, ৭০০ বছর আগে নরসিংদীতে এক বাউল ঠাকুর ছিলেন। তিনি নিজেকে শুধু বাউল বলেই পরিচয় দিতেন। এজন্য বাউল ঠাকুরের প্রকৃত নাম জানেন না এখানকার কেউই। সেই বাউল ঠাকুরের স্মরণে তার আখড়া ধামে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এই বাউল মেলা। তবে কে প্রথম এখানে বাউল মেলার আয়োজন করেন তার প্রকৃত তথ্য কারোই জানা নেই । সর্বশেষ ব্রিটিশ শাসনামল থেকে এখন পর্যন্ত মেলার আয়োজন করছেন স্বর্গীয় মনিন্দ্র চন্দ্র বাউলের পরিবার। বর্তমানে এই মেলায় আয়োজকদের মধ্যে রয়েছেন মনিন্দ্র চন্দ্র বাউলের পরিবারের সদস্য সাধন চন্দ্র বাউল, মৃদুল বাউল মিন্টু, শীর্ষেন্দু বাউল পিন্টু, মলয় বাউল রিন্টু এবং প্রাণেশ কুমার ঝন্টু বাউল।
বর্তমানে প্রাণেশ কুমার ঝন্টু বাউল নরসিংদীর বাউল আখড়া বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতি বছরের মতো এ বছরও মেলা উপলক্ষে আখড়াধামে হাজির হয়েছেন পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশ-বিদেশের শতাধিক বাউল সাধক। মরমী এ সাধকদের কাছে সাধনাই মূল ধর্ম। আত্মশুদ্ধি আর আত্বমুক্তির জন্য এ মেলায় আসেন তারা এবং তুলে ধরেন মানব প্রেমের গান। পূণ্যস্নান, মহাযজ্ঞ ও পূজা অর্চনায় যোগ দিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে বাউল ও পূণ্যার্থীর আগমন ঘটছে মেলায়। এদিকে বাউল মেলা উপলক্ষে দেশের নানা প্রান্তথেকে ব্যবসায়ীরা বাঙালির চিরচেনা মুখরোচক খাবার ও বাহারি পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছেন।
এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে আমিত্তি, জিলেপি, সন্দেশ, বারো মিঠাই, দই, মুড়ালি, গুড়ের তৈরি মুড়ি ও চিড়ার মোয়া, তিলের মোয়া, তিলের সন্দেশ, খাস্তা, কদমা, নারকেলের নাড়ু, তিলের নাড়ু, খাজা, গজা, নিমকি, মনাক্কা, গাজরের হালুয়া, পিঠাসহ রকমারি খাবার। এছাড়া শিশুদের খেলনা, ঘরের তৈজসপত্র, আসবাবপত্র, বিভিন্ন ধরনের তৈরি পোশাক, মাটি ও বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রসহ নানা ধরনের পণ্যের স্টল নিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা।
বাউল আখড়া বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক প্রাণেশ কুমার ঝন্টু বাউল বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও ঐতিহ্যবাহী এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। বাউল সম্প্রদায়ের নিয়ম অনুযায়ী মাঘি পূর্ণিমা তিথিতে এই মেলার আয়োজন করা হয়। কোনও প্রকার প্রচারণা ছাড়াই প্রতিবছর ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে মানুষের উপস্থিতিতে সরগম হয়ে উঠে এই মেলা।
N/P
© All rights reserved 2000-2025 © kalerchaka.Com
Leave a Reply