দ্বিতীয় স্টেশনে বাস থামলো,
জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই চোখ পড়লো যাত্রী ছাউনির ভিতরে থাকা একটা মেয়ের উপর অসাধারন সৌন্দর্য ওর, কাজল কালো দুটি টানা টানা চোখ, ঘন কালো ইয়া লম্বা চুল বাসের দিকে এগিয়ে আসছে বাতাসে ওর চুলগুলো চোখ-মুখে এসে পড়ছে অবাধ্য চুলগুলো বার বার কানে গুঁজে দিচ্ছে। ইতোমধ্যে জিয়ান মেয়েটার একটা নাম ঠিক করে ফেললো “কেশবতী কন্যা”। এরপরের ঘটনা নিছক কল্পনা মনে হতে লাগলো মেয়েটি গুটি গুটি পায়ে হেঁটে এসে জিয়ানের পাশের সিটে বসল, প্রথমে একটু লজ্জা পেলো জানালার দিকে চেপে বসলো, ভাবছে এতো সৌন্দর্যময় মেয়ে আগে কখনো দেখিনি। মনে মনে ঠিক করলো মেয়েটির সাথে কথা বলবে ধ্যাত না থাক মেয়েটি কি ভাববে, যদি কথা না বলে এভাবেই নানান কল্প-কথা মনে এঁকেই চলছে। মেয়েটির দিকে আড় চোখে তাকিয়ে তার অপরুপা সৌন্দর্যরূপ দেখছে। মেয়েটিও জিয়ানের দিকে তাকাচ্ছে তবে সে তাকানোতে কোনো মায়া বা ছন্দ নেই। জিয়ান ভেবেই ফেললমা সৃষ্টি কর্তা যতটা বাহ্যিক রুপ দিয়েছে ঠিক ততটাই হিংসা দিয়েছে মনের ভিতর। কিন্তু না ধারণাটা ভূল প্রমানিত হলো যতটা সময় যাচ্ছে ধারণাটা পাল্টে যাচ্ছে। মেয়েটার চাহনিতে কেমন যে একটা জিজ্ঞাস জিজ্ঞাস ভাব। জিয়ান নিজেকে নিজেই ধমক দিয়ে বললো ধুর এতো কিছু ভাবছি কেনো যদি ওর কিছু জানতে ইচ্ছে হয় জিজ্ঞাস করবে। উফ্ তখন ই ওর পড়ে গেল কথায় আছে, মেয়েদের বুক ফাঁটে তো মুখ ফোঁটে না। তখন নিজেকে স্থির করলো ও কথা বলবো তবে কি বলে শুরু করবে ভাবতে ভাবতে বেশ কিছু সময় পার করলো। কি বলি? কি বলে শুরু করবো?
-ইস্কুজমি, আপনার কাছে খাবার পানি হবে? (মেয়েটি জিয়ানের দিকে কেমন করে তাকাচ্ছে, চোখ ফিরিয়ে নিলো ও বাইরে দিকে তাকিয়ে আছে এখন। ভাবছে কি হিংসুটে মেয়ে গো বাব্বা।
-এই নিন পানি।
চমকে উঠলো জিয়ান খপ করে কাপাকাপ হাতে পানির বোতলটা নিয়ে খেতে শুরু করলো। মেয়েটি হাসছে-
-এই ভাবে পানি খেলে তো গলায় আটকাবে।
-না সমস্যা নেই।
-আপনি কোথায় নামবেন?
-দুই স্টেশন পরেই। আর আপনি কোথায় নামবেন?
-আজ নামবো না বাসে করেই ঘুরবো। যেদিকে বাসটা যায় সেইদিকে আমিও যাবো।
উফ্, কেমন মেয়ে। জিয়ান ভাবছে, কি জানতে চাইলাম আর কি শুনিয়ে দিলো। কথা বলাটাই মনে হয় ভুল হয়েছে।
-ওই! কি ভাবেন। ঘুরিয়ে কথা বলতে ভালো লাগে তাই বললাম। আমি ও দুই স্টেশন পরে নামবো।
-অহ্
এভাবেই দুজনের মধ্যে পরিচয় আদান-প্রদান হলো। যত সময় যাচ্ছে ততই জিয়ানের মেয়েটার প্রতি ভালো লাগা শুরু হচ্ছে। ধুর মেয়েটি বলছি কেনো ওর নাম রুবাইয়া জান্নত। ডাক নাম জান্নাত।
তৃতীয় স্টেশনে বাস থামলো যাত্রী নামলো আবার কিছু যাত্রী উঠলো। বাস আবার নতুন করে শ্বাস নিয়ে চলতে শুরু করলো। ওদের দুজনের মাঝে কথা চলছে তবে, আপনি করে নয় এখন তুমি করে বলছে। এমন ভাবে কথা হচ্ছে ওদের দুজনের হঠাৎ কেউ দেখলে বুঝতে ই পারবে না সবেমাত্র পরিচয় হয়েছে। মনে হবে হয়তো বা ওদের পরিচয় টা কত পুরনো। জিয়ান, জান্নাতের দিকে তাকিয়ে-
-তুমি দেখতে অনেক সুন্দর। বাইরে প্রকৃতি দেখছো, প্রকৃতি ও তোমার সৌন্দর্যের কাছে হার মানবে।
-হুম, আমি সুন্দর তবে তুমি একটু বাড়িয়ে বলছো।
-একদোম বাড়িয়ে বলছিনা। তোমাকে যদি কোনো কবি দেখতো তাহলে হয়তো এতক্ষণে তোমাকে নিয়ে কয়েকশত কবিতা লিখে ফেলতো।
মুচকি হেসে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। জিয়ান ওর কথা, হাসি, সৌন্দর্য সব কিছুর মায়া পড়ছে। এই প্রথম কোনো মেয়েকে দেখে জিয়ানের বুকের ভেতরটায় চিনচিন অনুভব করছে। এক কথায় ভালোবেসে ফেলেছে। তবে জান্নাত কে তো কথাটা বলবে। কেমনে বলবে, ভাবছে আর ঘামছে।
-জান্নাত।
-হ্যাঁ, বলো।
-একটা কথা বলতে চাই তোমাকে। আসলে আমি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলা পছন্দ করিনা। (কাঁশি উঠল, কথা আটকে গেলো। ওর দিকে পানি এগিয়ে দিলো। খপ করে পানির বোতলটা নিয়ে ডকডক করে পানি খেয়ে নিলো। জান্নাত ওর দিকে তাকিয়ে আছে।)
-আচ্ছা তোমার কি খারপ লাগছে না?
-না আমি ঠিক আছি।
-অহ্, তুমি যেন কি বলতে চেয়েছিলে। জিয়ান ভাবছে, এখন সময় নিলে হবে না আমাকে বলতেই হবে। কিছু না ভেবে ই বলে দিলো..
-আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। তোমার রুপের ঝ্বঙ্কার, ঘন কালো কেশ আমাকে পাগল করে দিয়েছে।
জান্নাত ওর দিকে অপলক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
-কিছু বলছো না কেনো? আমি তোমাকে জোর করছি না, আমি নেগেটিভ/পজেটিভ যে কোনো উত্তরের জন্য প্রস্তুত আছি। তুমি তোমার মনে ভাব প্রকাশ করতে পারো।
-সব কিছু বলতে হয়। বুঝে নেওয়া যায় না।
জিয়ান ভাবছে, আসলে মেয়েদের বুক ফাঁটে তো মুখ ফোঁটে না।
-জিয়ান কি ভাবো এতো?
-কই? কি? কিছুনা তো?
-আমাদের স্টেশন তো একটু দূরেই।
-হ্যাঁ। তোমার হাতটা না অনেক সুন্দর।
-হুমম (মুচকি হাসলো)
-তোমার হাতটা কি ধরতে পারি?
ও চুপ করে আছে কিছু বলছে না, কথায় আছে, নিরবতাই সম্মিতর লক্ষণ। জিয়ান নিজের হাতটা ওর দিকে বাড়িয়ে ওর হাতে হাত রাখতেই কেমন যেন গরম অনুভব করলো। উফ্ গরম সহ্য করতে না পেরে বলে উঠলো, কি গরম রে বাব্বা মনে হচ্ছে হাতটা পুড়ে গেল কি যন্ত্রণা।
চোখ খুলে হাতের দিকে তাকাতেই চোখ পড়লো পাশের সিটের মুরব্বি চাচা সিগারেট খাচ্ছিল, ও সিগারেটের আগুনে হাত দিছে।
-চাচা
-বাবা, তুমি এতো জায়গা রেখে সিগারেটের উপর হাত দিছো।
-চাচা আপনি? জান্নাত, জান্নাত কই?
-জান্নাত কে বাবা?
বাম হাত দিয়ে ভালো ভাবে চোখ মুছতে মুছতে ততক্ষণে বুঝতে পারলো ঘুমিয়ে গেছিলো ও আর এতো ক্ষণে যা ঘটছে সব স্বপ্ন ছিল।
-বাবা, অনেক পুড়ছে নাকি?
-না, ঠিক আছে।
-সামনের স্টেশনে নেমে ওষুধ কিনে লাগিয়ে নিয়।
-ঠিক আছে।
© All rights reserved 2000-2025 © kalerchaka.Com
Leave a Reply