:
: লক্ষ্মীপুরে চালের বাজারে চরম অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। গত এক সাপ্তাহের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি চালের দাম বেড়েছে তিনশ’ থেকে পাঁচশ’ টাকা পর্যন্ত। তবে চালের দাম এতো ঊর্ধ্বগতি কেন তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে চলছে নানা সমালোচনা। তাদের মতে, দেশে এবার প্রচুর পরিমানে বোরো এবং আমন ধানের চাষ হয়েছে। ধান বিক্রি নিয়ে বিপাকে পড়ে চাষীরা। তাহলে হঠাৎ চালের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ কি? এমন প্রশ্ন জনসাধারণের। সঠিক নজরদারির অভাবকে দায়ি করছেন তাঁরা।
সরেজমিনে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা দোকানে পায়জাম চালের ৫০ কেজির বস্তা ২০৫০ থেকে ২১শ’ টাকা, স্বর্ণা (মোটা) দুই হাজার আর মিনিকেট (২৮) ২২শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু গত এক সাপ্তাহ আগে যার দাম ছিলো ১৪শ’ থেকে সাড়ে ১৪শ’ টাকা। আর চাল কলে পাইকারী মূল্য ১৮৫০ টাকায় স্বর্ণা (মোটা) এবং মিনিকেট চালের বস্তার দাম ২০৫০ টাকা। গেল এক সাপ্তাহ আগেও চাল কলে (মিল) এ সব চালের দাম ছিলো বস্তাপ্রতি ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা কমে।
জানা গেছে, করোনা ভাইরাস আতঙ্কে ঘর থেকে বের হওয়ার ভয়ে চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য আগাম মজুদ শুরু করেছে অতি উৎসায়ী ক্রেতারা। এতে করে চালসহ ওই সব পণ্যের দাম হু হু করে বেড়ে গেছে। ৪০ টাকা কেজি পেয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। বেড়েছে রসুন এবং আলুর দামও। খুচরা বাজারে কেজি প্রতি ১৪ টাকার আলু এখন বিক্রি হচ্ছে ২১ থেকে ২২ টাকায়।
তবে বাজারে শুধু চাল নয়- বেড়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের দামও।
‘‘গেল বাজারে এক কেজি পেয়াজ কিনেছি ৪০ টাকা দিয়ে, এখন সে পেয়াজের কেজি ৬৫ টাকা।” ক্ষোভ প্রকাশ করলেন সদর উপজেলার জকসিন বাজারের এক ক্রেতা।
মান্দারী বাজারের এক মুদি ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘ক্রেতাদের অতিরিক্ত চাহিদা থাকায় চালসহ বিভিন্ন দাম বেড়ে গেছে। প্রয়োজন ছাড়াও কিছু কিছু পণ্য কিনে নিচ্ছে তারা। যার কারণে দাম বৃদ্ধির দিকে।’’ চাহিদা কমে গেলে দামও কমে যাবে। -বললেন তিনি।
এদিকে, চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজারে অভিযান চালাচ্ছে প্রশাসন। এতে ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হলেও কোনভাবে মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। অভিযানের পরপরই উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে তারা। এতে সাধারণ ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
ক্রেতাদের মতে, সঠিক মনিটরিং এর অভাবে বাজারদর নিয়স্ত্রণের বাহিরে চলে যাচ্ছে। আর বিক্রেতাদের মতে, খুচরা বিক্রেতাদের ওপর নজরদারি বা জরিমানা করে পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভভ নয়।
‘‘মূল্যটা প্রথম যেখানে নির্ধারিত হয়, মনিটরিং করতে হবে সেখানে। আমরা যে দরে কিনি- ক্রয়মূল্য, পরিবহণ ও আনুষাঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে নূন্যতম লাভ করে পণ্য বিক্রি করি। আমাদের লাভ সীমিত। সরকারের উচিত চালের ক্ষেত্রে মিল বা চাল আমদানীকারকদের ওপর নজরদারি করতে। সেখানে মূল্য নির্ধারণ করে দিলে আমরাও কম মূল্যে চাল ক্রয় এবং বিক্রয় করতে পারবো। ’’- বললেন সদর উপজেলা জকসিন বাজারের এক মুদি ব্যবসায়ী।
বলেন, ‘‘পেয়াজ আমদানিকারক এবং আড়ৎদারদের ওপরও নজরদারি করলে দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।’’
চালের দাম বাড়ার কারণ নিয়ে কথা হয় সদর উপজেলার একটি চাল কলের সংশ্লিষ্টদের সাথে। চালের দাম বাড়ার পেছনে ধানের দাম বৃদ্ধিকে দায়ি করেছেন তারা।
‘‘কৃষকদের হাতে ধান নেই। ধান কিনতে হচ্ছে বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। তারা যেভাবে ধানের দাম নির্ধারণ করে দেবে, আমাদেরকে সেই দামেই কিনতে হয়। আর আৎতদাররা ধান দিতে চাচ্ছেনা। হয়তোবা তারা গুদামজাত করে ফেলেছে। সুযোগ বুঝে বেশি দামে বিক্রি করে দিবে। তাই এখন চালের দামও বেশি।’’ -বললেন, চরচামিতার হাজী নুরুল ইসলাম অটোরাইস মিলের ম্যানেজার কানু লাল দে।
তিনি বলেন, ‘‘বর্তমানের ধানের মন এক হাজার টাকারও বেশি। বাজারে যে পরিমানে চালের চাহিদা রয়েছে, সে পরিমানে ধান নেই। তাই চালের দাম এখন বেড়ে গেছে। আমরা নিজেরা দাম বাড়াইনি। আমাদের লাভ সামান্য। ’’
© All rights reserved 2000-2023 © kalerchaka.Com
Leave a Reply