আচ্ছা, কেউ যখন আপনার দুঃসময়ে আপনাকে গালি দেবে আবার ঠিক এর কিছুদিন পরেই আপনার সুসময়ে আপনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠবে তখন তার সম্পর্কে আপনি কি ভাববেন?
তখন আপনি ধরে নেবেন, হয় সে আপনাকে শুধু গালিই দিয়েছে বা শুধুই প্রশংসা করেছে বা এই ব্যক্তি সুযোগসন্ধানী (?)। রাজনৈতিক বেইশ্যা ও বলা যায় এদেরকে…
২০১৮ এর এপ্রিল মাসের এই সময়ে তখন এমন অনেক ঘটনাই ঘটেছিলো।
আজ যে তেনাকে/ছেলেটিকে আপনি ছাত্রলীগের অনেক বড় পদ লাগিয়ে ঘুরতে দেখছেন সেইদিন হয়তো তিনিই সরকার বিরোধী আন্দোলনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মদদ দিচ্ছিলো ঐ নুরু-রাশেদদের। ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য কেউ আবার একদম ই চুপ ছিলো কেউ আবার সংগঠনকে ভালোবেসে অনেক রক্ত ও দিয়েছিলো যেমন Khadimul Bashar Joy ভাই সহ আরো অনেকেই।
আবার কেউ কেউ হয়তো সেইদিনও আমার মতই নিজের জীবন বাজি রেখে দলের জন্য বা সংগঠন এর জন্য সারারাত ভিসির বাড়িসহ বিভিন্ন আবাসিক হল পাহাড়া দিচ্ছিলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য।
ভিসির বাড়ি থেকে, নুরু রাশেদ গংদের সেই তাণ্ডব ঠেকাতে গিয়ে Motahar Hossain Prince ভাই আহত হইছিলেন, আমার বাইকে করেই ভাইকে ঢাকা মেডিকেল এ নিয়ে গেছিলাম।
এখোনো মনে আছে, প্রিন্স ভাই বাইকে করে যাওয়ার সময়ে উঁনি চিল্লায় চিল্লায় বলতেছিলো, “এবি সিদ্দিক মরে নাই, মরে নাই, সব ই গুজব, গুজব থেকে সাবধান, আপনারা সবাই হলে ফিরে যান, রুমে ফিরে যান”।
প্রিয় লেখক ভট্টাচার্য্য দা, আপনার অবশ্যই মনে থাকার কথা একাত্তর হলের সামনে ওই গভীর রাতে আমার মোবাইলে একটা কল আসছিলো, আর আমি তখন কানেকানে(কানেমুখে) আপনাকে জিগাইছিলাম কিভাবে কি বলা উচিত? তখন আপনি পরামর্শ দিয়েছিলেন যেভাবে বলার জন্য সেইভাবেই বলেছিলাম মোবাইলের ওপারের তাঁকে।
এরপর আসলাম মুহসিন হলের সামনে,
জহির রায়হান সরকার ভাই, মেহেদী হাসান সানী, মনে আছে? তোর হলের সামনে থেকে যখন আমি, প্রিন্স ভাই, হাসান ভাই, ইমতিয়াজ বুলবুল বাপ্পি ভাই, সবাই মিলে অনেকক্ষণ দাড়ায় ছিলাম, তখন মেবি রাত ৩.৫০? Kazi Enayet ভাই আসলো, এরপর আমরা কয়েকজন ঐখান থেকে বের হলাম, আমি হলের দিকে গেলাম।
এরপর হল গেইটে আসলাম, আসতেই শুনি রহমান ভাইয়ের মাথা ফেটে গেছে,বন্ধু Kamal Uddin Rana আর Muktakim Gony Bhuyain আমার বাইক নিয়ে মেবি শ্যামলী গেলো রহমান ভাইকে দেখতে অই গভীর রাতেই….
বন্ধু সানী,
শোভন রাব্বানী তোকে আমাকে পদ দেয়নি। সেই রাতে অবশ্য শোভন রাব্বানী ভাই কই ছিলো তাও আমি জানি না। হয়তো তারাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলো বা নীরব ছিলো বা……
২০১৮-র কোটা সংস্কার আন্দোলন বাংলাদেশে সব ধরনের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটার ভিত্তিতে নিয়োগের প্রচলিত ব্যবস্থার সংস্কারের দাবির একটি আন্দোলন। ১৯৭২ সাল থেকে চালু হওয়া কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে চাকরি প্রত্যাশীরা ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’-এর ব্যানারে শিবির, ছাত্রদল, দেশদ্রোহী, জঙ্গি, স্বাধীনতার বিরোধী পক্ষ সকলে একত্রিত হয়ে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ এবং মানববন্ধন সহ নানান ধরনের সরকার বিরোধী কর্মসূচি পালন করে। যাদের মূল লক্ষ ছিলো…..
(১) সরকারের পতন ঘটানো/সরকারকে বেকায়দায় ফেলা।
(২) ছাত্রলীগকে কলঙ্কিত করা।
(৩) সাধারণ মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে নুরু-রাশেদ-ফারুকদের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করা সহ আরো অনেক কিছুই।
আজ সেই ৯ এপ্রিল….
**আমার হল থেকেই কাফনের কাপড় পরে বের হওয়া ছেলেটা আজ নিজেকে ছাত্রলীগের অনেক কিছুই মনে করে। Asif Talukder ভাই মনে আছে? কল দিয়ে বলেছিলাম।
**ছাত্রলীগকে মন ভরে গালী দেয়া ছেলেটা আজ অনেক বড় পদধারী (অসংখ্য স্ক্রিনশট মার্কেট এ আছে)।
**সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করা ছেলেটাও আজ ছাত্রলীগের অনেক ভালো অবস্থায় চলে এসেছেন শোভন-রাব্বানীর বদান্যতায়।
**প্রত্যক্ষ কোটা আন্দোলনের সাথে জড়িত, সংগঠক
এমন ছেলেকেও শোভন-রাব্বানী অনেক ভালো যায়গা দিয়ে গেছে, ব্যক্তিগত পছন্দের কারনে তাদের সেরাদের সেরা নিয়ে গঠিত কলঙ্কিত সেই পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে।
**আবার আজকের সেই রাত্রে সারারাত আমাদের সাথেই জেগে থাকা জয়-লেখকের মত যোগ্য লোককেও সব থেকে ভালো সম্মানটাও দিয়ে গেছেন যা অনস্বীকার্য।
**এক বড় ভাই একটা কথা বলতেন, দিন শেষে যে যার (প্রেসিডেন্ট বা সেক্রেটারি) লোক ই হোক পার্টির কিছু ছেলে থাকে, দলের কিছু ছেলে থাকে। এদের পারিশ্রমিক হিসেবে হলেও মূল্যায়ন করা উচিত বা এরা মূল্যায়িত হবে। সানী, Tuhin Reza ভাই, Al-Amin Rahman, Rana Hamid Ismail Hossain এমন আরো অনেক নাম আছে, যারা পার্টির ছেলে, এরাও মূল্যায়িত হয়নি… (হয়তো কথাটা সত্য, হয়তো মিথ্যা, শোভন রাব্বানী এদের ক্ষেত্রে অবশ্য মিথ্যাই)।
লাগাতার আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে শিবির ও ছাত্রদলের ক্যাডারদের অভূতপূর্ব অংশগ্রহণের ফলে ২০১৮ এর আজকের রাত্রে অনেকেই স্বেচ্ছায় সংগঠনের জন্য অনেক কিছুই করেছিলো, তাদেরকে সম্মানের সাথে স্মরণ করছি।
আর সেই রাত্রের রাজনৈতিক বেইশ্যাদের ধিক্কার জানাচ্ছি।
লেখক :
শেখ আব্দুল্লাহ
সাবেক উপ-প্রচার সম্পাদক
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
© All rights reserved 2000-2025 © kalerchaka.Com
Leave a Reply