পারভেজ মোশারফ :
বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস এক মহা-আতঙ্কের নাম।চীনের উহান প্রদেশে এর উৎপত্তিস্থল হলে চীন সহ মধ্য প্রাচ্যের অনেক দেশকেই এই ভাইরাস মৃত্যুপূরীতে নাম লিখিয়েছে।করোনা ভাইরাসের এই কবল-গ্রাস থেকে বাংলাদেশও রেহাই পায় নেই।গত মার্চের শুরতে বাংলাদেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।এপ্রিলের প্রথম থেকেই বাংলাদেশে করোনা মহামারী আকার ধারন করতে থাকে।বাড়ছে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা।করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে ঘরে থাকার নির্দেশনা পালন করা হচ্ছে।তাই সারা দেশের ন্যায় ইতিমধ্যে চাদঁপুর জেলা প্রশাসন থেকে পুরো জেলাকে লক ডাউন ঘোষনা করা হয়।
এই লক ডাউনে সরকার থেকে মানুষকে যখন জনসমাগমে যেতে নিবৃত করা হচ্ছে। মানুষ যখন তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় নিয়ে একটু চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।কারন মানুষকে তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্য বাহিরে যেতেই হবে।এতে করে দেশে সংক্রম আরো বাড়তে থাকবে। ঠিক তখনই মানুষকে ঘরে রাখতে চাদঁপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলায় সংবাদকর্মী ও বিতার্কিক রাসেল হাচানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পড়ুয়া ২১ জন তরুনের সমন্বয়ে গঠন করে ” বাজার বাড়ি” নামের একটি সেচ্ছাসেবী কার্যক্রম।
“ঘরের মানুষ ঘরে রবে,ওষুধ বাজার পৌঁছে যাবে” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে ৬টি হটলাইন নাম্বারের মাধ্যমে বাজার বাড়ি মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের অর্ডার গ্রহন করে পৌরসভায় তাদের তৈরী করা বাজার বাড়ি অস্থায়ী কন্ট্রোল রুম থেকে।তারপর তারা নিদিষ্ট দোকান থেকে পণ্য ক্রয় করে মানুষের ঘরে পৌছে দিচ্ছে।দোকানের ভাউচার অনুযায়ী তারা পন্য বুঝিয়ে দেওয়ার পর শুধু মাত্র পন্যের মূল্য নিয়ে আসে।দিতে হয় না তাদের কোন যাতায়ত ভাড়াও।তারা এই সেবা পৌছে দেওয়ার জন্য ১০ টি মটরসাইকেল নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন আজকে ৪২ দিন পর্যন্ত।বাজার বাড়ি এই পর্যন্ত উপজেলার প্রতন্ত্য অঞ্চলে এক হাজার একশের অধিক পরিবারকে এই সেবা পৌছে দিয়েছে।
পথ যত দূরেই হোক, রাত যত গভীর হোক কেন কিছুই যেন তাদের সামনে বাধা হয়ে দাড়ায় না। রোদ-বৃষ্টি, ঝড়-তুফানের, রাস্তার কাদা সব কিছু উপেক্ষা করে যে প্রান্ত থেকে কল আসবে সাথে সাথে তাৎক্ষনিক মানুষের দরজায় প্রয়োজনী জিনিসপত্র নিয়ে হাজির হয় বাজার বাড়ির সদস্যরা।
করোনার এই সময়ে বাজার বাড়ির এই মহতি সেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম যেন পুরো উপজেলাবাসীর জন্য একটি আশ্রয়ের জায়গায় হয়ে দাড়িয়েছে।রাতের গভীরেও বাজার বাড়ি থেকে উপজেলাবাসী জরুরী সেবা পেয়ে যাচ্ছে। তাদের এই কার্যক্রমে উপজেলা প্রশাসন থেকে শুর করে সাংবাদিক ও সচেতনমহল সহ পুরো উপজেলাবাসী তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে যাচ্ছে।
বাজার বাড়ি সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলী হরি গনমাধ্যমকে জানান,বাজার বাড়ির এই কার্যক্রমে তারা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।তারা আমাদের সকল উপজেলা ও ইউনিয়নের জন্য তারা অনুকরনীয়।তাদের মতো সব জায়গায় যদি সেচ্ছায় এ ধরনের সেবা চালু হয় তাহলে বাজারে আমাদের জনসমাগম অনেকটা কমে যাবে।
সংগঠনের উদ্যোক্তা রাসেল হাসানের কাছে বাজার বাড়ি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন কোন দিন ফোন কলের সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়ে যায়।
এত সংখ্যক ফোন কলের ভিড়ে আমরা নিরুপায় না হয়ে আরো বেশি উদ্যমী হই এই ভেবে যে, ফরিদগঞ্জের মানুষ আমাদের উপর আস্থা রেখেছে। মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা প্রতিদান হিসেবে বাজার বাড়ি আজকে ১ মাস ১২ দিনে ঔষধ-বাজারের জরুরী সেবা দিয়েছে সহস্রাধিক পরিবারকে এবং আজ পর্যন্ত মোট সেবাগ্রহীতা পরিবারের সংখ্যা প্রায় ১২০০ টি।
উল্লেখ্য এই স্বেচ্ছাশ্রমের সাথে জড়িত ২১ জন হলেন -রাসেল হাসান, জিয়াউর রহমান, গিয়াস উদ্দিন, সাদ্দাম হোসেন, মামুন হোসেন, মেহেদী হাসান মুন্না, তানজিল ইসলাম রনি, ইব্রাহিম খলিল, আশরাফুল ইসলাম আবির, জাহিদুল ইসলাম রাসেল, শামীম হাসান, মহসিন আহমেদ আলিফ, পিয়াস চন্দ্র দাস, মাহমুদুল হাসান সম্রাট, আজহারুল ইসলাম সাকিব, আওলাধ মৃধা, কাওছার হোসেন, মাহমুদ জিহাম, দেলোয়ার হোসেন, ফরিদুল ইসলাম ও মাসুদুল আমিন পিয়াম।
© All rights reserved 2000-2025 © kalerchaka.Com
Leave a Reply