পলাশী ট্র্যাজেডি থেকে আমরা কী শিক্ষা পাই
২৩ জুন। ঐতিহাসিক পলাশী দিবস। ১৭৫৭ সালের এই দিনে পলাশীর আ¤্রকাননে নবাবের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্ত যায়। পরবর্তীতে ক্রমান্বয়ে গোটা ভারতীয় উপমহাদেশ স্বাধীনতা হারায়। সেই পরাধীনতার শেককল বয়ে বেড়াতে হয়েছে দুশো বছর। পলাশীর প্রান্তরে বাংলার নবাবের পরাজয় জাতির জন্য বিরাট বড় একটি শিক্ষা। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, পলাশীর যুদ্ধে নবাবের পরাজয়ের পরও জাতি আজো সেই ঘটনা ন্যূনতম শিক্ষা গ্রহণ করেনি। পলাশীর প্রান্তরে নবাবের পরাজয়ের পেছনে ঐতিহাসিকগণ মীরজাফরকে দায়ী করলেও এর পেছনে ছিল এক গভীর ও অন্তর্নিহিত কারণ। ইংরেজদের সাথে পলাশীর প্রান্তরে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার সময় নবাব সিরাজ-উ-দৌলাহর বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা ছিল ৫০,০০০ হাজার আর রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বে ইংরেজ বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা ছিল ৩৫০০। যে মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতার দরুণ নবাব সিরাজ-উ-দৌলাহর পরাজয় হয় বলে উল্লেখ করা হয়, তার অধীনে ছিল ১৬০০০ সৈন্য, যারা যুদ্ধের সময়ে প্রধান সেনাপতির হুকুমে নীরব দর্শকের মত দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হয়। এরপরও নবাবের হাতে যে বিপুল সংখ্যক সৈন্য ছিল তা দিয়ে ইংরেজদের পরাজিত ও বিতাড়িত করা সম্ভব ছিল। কিন্তু বাংলার নবাব সেদিন পরাজিত হয়ে, জীবন দিয়েও বাংলার মাটিকে, প্রিয় জন্মভূমিকে দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে রক্ষা করতে পারলেন না। কেন পারলেন না? যেখানে সৈন্য সংখ্যা, অস্ত্রভান্ডার, রসদ ও বাহন বিদেশিদের তুলনায় অনেক বেশি তাছাড়া প্রকৃতি, পরিবেশ সবই ছিল নিজেদের অনুকূলে তথাপি এই ঐতিহাসিক পরাজয়ের কারণ ছিল জাতির মধ্যে অনৈক্য এবং ক্ষমতালোভী স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠির ষড়যন্ত্র। সেদিন মীরজাফর, ইয়ার লতিফ খান, ঘষেটি বেগম, রাজা রাজবল্লভ, রায়দূর্লভ, জগৎশেঠ, মানিক চাঁদ, আমির চাঁদ প্রমুখ নবাবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। জাতির অনৈক্যের কারণেই রবার্ট ক্লাইভের ৩৫০০ ইংরেজ সৈন্যের কাছে নবাবের ৫০,০০০ সৈন্যকে পরাজয় বরণ করতে হয়েছিল। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা বাঙালি জাতি যদি অনৈক্য, হানাহানি ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, যদি প্রিয় জন্মভূমিকে সাম্রাজ্যবাদীদের চক্রান্ত থেকে মুক্ত রাখতে পারি তাহলে ভবিষ্যতে আর কখনো পলাশীর প্রেক্ষাপট তৈরি হবে না।
মোহাম্মদ ইয়ামিন খান
শ্যামলী, ঢাকা।
Daily Inqilab (aditya.fouzder@link3.net) , 2020-06-23 06:03:55
© All rights reserved 2000-2025 © kalerchaka.Com
Leave a Reply