কিশোরগঞ্জে ধর্ষণের পর অন্তঃসত্ত্বা দুই কিশোরী!
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস2020-06-22
কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামে পৃথক স্থানে ধর্ষণের পর ছাত্রীসহ দুই কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে। উপজেলার কাস্তুল ও দেওঘর ইউনিয়নে এই পৃথক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। অষ্টগ্রাম উপজেলার দেওঘর ইউনিয়নের এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কিশোরী (১৫) ধর্ষণের শিকার হয়ে ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে। ধর্ষণের শিকার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কিশোরীকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে জাসেম মিয়া (২১) তার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে একাধিকবার ধর্ষণ করে।
ধর্ষণের শিকার মেয়েটির পরিবার, পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ধর্ষক জাসেম দেওঘর ইউনিয়নের মোল্লা বাড়ীর আলমগীর মিয়ার ছেলে। এ বছরের ৩ জানুয়ারি বিকালে ধর্ষক জাসেম অর্থ ও পোশাকের প্রলোভন দেখিয়ে হাজী এমরান মিয়ার দোচালা টিনের ঘরে নিয়ে কিশোরীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। পরে নানা সময়ে ধর্ষক জাসেম একাধিকবার মেয়েটির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হয়। বর্তমানে তিনি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
ঘটনা অনুসন্ধানে জানা যায়, ধর্ষিতা মেয়েটির বাবা (৭০) পেশায় ভিক্ষুক। নিজের কোনো জমিজমা না থাকায় বিভিন্ন মানুষের জায়গায় আশ্রয় বানিয়ে জীবন যাপন করেন। তারই প্রেক্ষিতে তিনি দেওঘর ইউনিয়নের মোল্লা বাড়ীর হাজী এমরান মিয়ার বাড়িতে বর্তমানে আশ্রয়াধীন আছেন। তার এই দরিদ্রতার সুযোগ নিয়ে ধর্ষক জাসেম প্রায়ই তার ঘরে যাওয়া আসা করতো। এক পর্যায়ে তার কিশোরী মেয়েকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে মেয়েটির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে এবং কাউকে না বলার জন্য কিশোরীকে নিষেধ করে।
ধর্ষণের শিকার কিশোরী বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ায় সে কাউকে কিছু না বলে চুপ থাকে। ঘটনার কয়েক মাস পেরিয়ে গেলে মেয়েটির শারীরিক পরিবর্তন ধরা পরলে ধর্ষক জাসেম কর্তৃক একাধিকবার ধর্ষণের কথা কিশোরী স্বীকার করে। পরে এ বিষয়ে গত ২০ জুন অষ্টগ্রাম মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কিশোরীর বাবা মামলা করেন।
মামলার খবরটি জানাজানি হলে ধর্ষক জাসেমের পরিবার ধর্ষিতার পরিবারকে নানা ধরণের ভয় ভীতি ও হুমকি দিয়ে আসছে বলে ধর্ষণের শিকার মেয়েটির পরিবার জানায়।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আসাদুজ্জামান জানান, মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসাপাতালে তার শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে মেয়েটিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিনিয়র ম্যাজিসট্রেট আদালতে হাজির করা হলে ম্যাজিস্ট্রেট তাসলিম আক্তার ধর্ষণের শিকার কিশোরীর ২২ ধারায় জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। আসামি গ্রেপ্তারের জন্য চেষ্টা চলছে।
এছাড়া অষ্টগ্রাম উপজেলার কাস্তুল ইউনিয়নের মসজিদজাম এলাকার সোনারু হাটি গ্রামের এক কিশোরী (১৩) গণধর্ষণের শিকার হয়ে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে। ঘটনা ধামাচাপা দিতে তৎপর স্থানীয় প্রভাবশালী একটি পক্ষ।
ভিকটিম কিশোরী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, কিশোরী মেয়েটি স্থানীয় অষ্টগ্রাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। এ বছরের ১৬ জানুয়ারি রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেলে পাশের বাড়ির দুই ধর্ষক কিশোরীর নিজ ঘরে ঢুকে দড়ি দিয়ে তাকে বেঁধে ফেলে। প্রথমে মনসুর ও পরে নজরুল হত্যার হুমকি দিয়ে মেয়েটিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। মেয়েটির চিৎকারে ধর্ষণের বিষয়টি এলাকাবাসী টের পেয়ে গেলে দুই ধর্ষক দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
ভিকটিম কিশোরীর মা আছমা বেগম বলেন, আমার স্বামী আমি ও আমার মেয়েকে ফেলে রেখে অন্যত্র বিয়ে করে চলে যায়। ফলে মেয়েটিকে নিয়ে আমি একেবারেই দরিদ্র অবস্থায় দিনাতিপাত করছি। যার কারণে সংসার চালানোর দায়ে ঢাকার গুলশান এলাকায় একটি বাসায় গৃহ পরিচারিকার কাজ করি। ছুটিতে মাঝে মধ্যে বাড়িতে আসি। মেয়েটি বাড়িতে একা থেকে স্কুলে লেখাপড়া করে। আমার মেয়ে একা থাকার বিষয়টি ধর্ষক মনছুর বাড়ির পাশে হওয়ায় আগে থেকেই জানতো এবং সেই সুযোগে মনছুর ও নজরুল মিলে আমার মেয়ের এমন সর্বনাশ করেছে।
তিনি বলেন, আমি সু-বিচার ও সামাজিক লজ্জার কারণে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানাই। কিন্তু তারা আমাকে এর সুষ্ঠু বিচারের আশা দিয়ে একাধিক তারিখ দিয়ে কালক্ষেপন করতে থাকেন। ঘটনার কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো মীমাংসায় আসতে পারেননি। এদিকে মেয়েটির শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে থাকলে আমার সন্দেহ হয়। পরে স্থানীয় একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে মেয়েটিকে গর্ভকালীন পরীক্ষা করালে রিপোর্টে আমার মেয়ে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বলে জানতে পারি। বিষয়টি মীমাংসা না করে বরং উল্টো আমাদের উপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করছে ধর্ষকের পরিবার ও স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কিশোরীর পরিবারের দরিদ্রতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল বিষয়টিকে নানাভাবে ধামাচাপা দেয়ার লক্ষ্যে কিশোরীর পরিবারকে মোটা অংকের টাকাসহ বিভিন্ন প্রলোভনের মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।
এ বিষয়ে কাস্তুল ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল হক রন্টির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। এটা আইনের বিষয়, আইনগত কোনো ব্যবস্থা হলে আমি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সার্বিক সহযোগিতা করবো। ঘটনাটি অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে ধামাচাপা দেয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানিনা।
অষ্টগ্রাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম মোল্যা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দুটি ঘটনা আমি শুনেছি। দেওঘর ইউনিয়নের ঘটনায় ধর্ষণের শিকার মেয়েটির বাবা মামলা করেছেন। মেয়েটির জবাবন্দী নেয়া হয়েছে।
ওসি বলেন, আমি মৌখিকভাবে কাস্তুল ইউনিয়নের মসিজদজাম এলাকার গণধর্ষণের বিষয়টি শুনেছি। তবে এ বিষয়ে ভিকটিমের পরিবার লিখিত কোনো অভিযোগ দায়ের করেননি। লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। দুটো ঘটনায় জড়িত আসামিরা পলাতক রয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আশা করি খুব দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার করা যাবে।
(ঢাকাটাইমস/২২জুন/কেএম)
Leave a Reply