রাজশাহী মহানগরীতে করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৮২ জন । সোমবার (২২ জুন) রাত ১০টা পর্যন্ত রাজশাহীর দুই পিসিআর ল্যাবে নমুনা শনাক্তের তথ্য অনুযায়ী নতুন করে আরও ৮৬ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে মহানগরীতে বসবাসকারী ৪৩ জন, যা একদিনের হিসাবে সর্বোচ্চ। সব মিলে রাজশাহী জেলায় কোভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ৩০৩ জনে।
জেলা সির্ভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে, রববার (২১ জুন) পর্যান্ত রাজশাহী জেলায় কোভিড রোগীর সংখ্যা ছিল ২৬০ জন। এর মধ্যে নগরীতে ছিল ১৩৯ জন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ল্যাবে নগরীর ৩২ জন ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ল্যাবে নগরীর ১১ জনের করোনা শনাক্ত হয়।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ল্যাবে শনাক্ত হওয়া ৫৪ জনের মধ্যে রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকার ১১ জন, পাবনা সদরের ৪০ জন, পাবনা চাটমোহর ৩ জন।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, সোমবার তাদের ল্যাবে ১২০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে রাজশাহী নগরীতে থাকা ৩২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এরা হলেন- রামেকের পিংকু হোস্টেলের শিক্ষার্থী মিজানুর (২৫), মিঠুন (২৫), রামেক হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স দুলাল (৩০), লাবনী (২৯), নারগিস (৪০), নাসরিন (৩৮), নগরীর সাগরপাড়া এলাকার বাসিন্দা শাহীন (৪০), সেখের আলী (৪০), বকুল (৩৭), দড়িখড়বোনা এলাকার আমানুল্লাহ আমান (২২), উপশহরের আসাদ (৫৫), ডিঙ্গাডোবা এলাকার ওয়াসিউর রহমান (৪০), নগরীর ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবদুল আজিম আল গাজী (৪৪), ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আশরাফুল মামুন (৫৫), মনিরা সুলতানা (৪৬), কওমি (৯), জোসনা (৩০), নারগিস খাতুন (২৩), আসাদুল (৫৫), ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের নাদিরা সুলতানা (৬৭), ইউডি স্বাস্থ্য বিভাগের পারভেজ আনোয়ার (৪০), ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাংবাদিক মোফাজ্জল হোসেন বিদ্যুৎ (২৪), ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের ফয়সাল (৩১), বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রেজাউল (৪৫), শরিফুল (৫৭), রোখসানা (৫৭), নেভা (২১), শহিদুল (৪৩), মিলন (৪০), আবুল কালাম (৩৫) স্বর্ণ কমল সাহা (৩৪) এবং জাহিদুল (৪০)।
অন্যদিকে, রামেকের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান ডা. সাবেরা গুলনাহার জানান, তাদের ল্যাবে ১৮৭টি নমুনার রিপোর্ট হয়েছে। এতে ৫৪টি নমুনা করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৪৩ জনের বাড়ি পাবনা। আর বাকি ১১ জনের বাড়ি রাজশাহী মহানগরী। নগরীর নতুন শনাক্ত এসব কোভিড-১৯ রোগীরা হলেন- আতিয়া (২০), আবদুল খালেক (৫৯), রাহাত হোসেন জনি (২৫), লায়লী (৩৬), ফাতেমা (২৮), রিপন (৩৬), আলমগীর (৩৬), হাফিজুল কাদের (২৮), রফিকুল ইসলাম (৩৫), সারওয়ার (৩৭) এবং নাজরিন সুলতানা (৩৩)।
করোনা উপসর্গ নিয়ে আরও চারজনের মৃত্যু
রাজশাহীতে করোনার উপসর্গ নিয়ে একদিনে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজনই মারা গেছেন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে। আর একজন মারা গেছেন রাজশাহীর ক্রিশ্চিয়ান মিশন হাসপাতালে। রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, সোমবার (২২ জুন) দিনের বিভিন্ন সময় এই চারজন মারা গেছেন। মৃত্যুর পর তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
রামেক হাসপাতালে মারা যাওয়া রোগীরা হলেন- রাজশাহী মহানগরীর দরগাপাড়া এলাকার বাসিন্দা ইনতাজ আলী (৬৫), নগরীর ছোটবনগ্রামের বাসিন্দা আমজাদ আলী (৭২) এবং নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার ইস্থান নিউজ (৪৫)। এদের মধ্যে আমজাদ আলী দৈনিক ইনকিলাবের রাজশাহী ব্যুরো ইনচার্জ রেজাউল করিম রাজুর মামা। মিশন হাসপাতালে মারা যাওয়া রোগীর নাম তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। এর আগে রবিবার সকাল থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে রামেক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চারজন মারা গেছেন করোনার উপসর্গ নিয়ে। এদের মধ্যে আহমেদ কুরিয়ার সার্ভিসের মালিক নবুয়াত আলীও (৫০) রয়েছেন। মারা যাওয়া অন্য তিনজন হলেন- রাজশাহী মহানগরীর শাহমখদুম থানার পবা নতুনপাড়া এলাকার বাসিন্দা মতিউর রহমান (৫৬), জেলার বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম এলাকার বাসিন্দা মো. সেন্টু (৪৮) এবং নগরীর মহিষবাথান এলাকার আইজ উদ্দিন (৭২)। এই চারজনের মধ্যে তিনজনই রোববার রাত ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে মারা গেছেন। শুধু আইজ উদ্দিন মারা যান সকালে। এ নিয়ে দুই দিনে রাজশাহীতে করোনার উপসর্গ নিয়ে আটজনের মৃত্যু হলো।
রামেক হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এবং এ রোগের উপসর্গ নিয়ে সোমবার (২২জুন) সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪৮ জন রোগী মারা গেছেন। এদের মধ্যে ৮জন রোগী করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। আর ৪০ জন রোগী মারা গেছেন করোনা উপসর্গ নিয়ে। এদের সকলেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
Leave a Reply