যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় দেশ হিসেবে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যায় ৫০ হাজারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে ব্রাজিল। এর মাত্র কয়েক দিন আগেই দেশটিতে নিশ্চিত আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখ পার হয়েছে। এদিকে মহামারির মধ্যে দেশটিতে রাজনৈতিক সংকটও বাড়ছে। প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো ও তার ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তের মধ্যে দেশটির বিভিন্ন শহরে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। আবার প্রেসিডেন্টের সমর্থকেরাও রাজপথে পাল্টা অবস্থান নিয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
করোনাভাইরাসের মহামারিতে ব্রাজিলে গত ৪ জুন একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু রেকর্ড করা হয়। তারপর থেকে সাত দিনের গড় হিসেবে দেখা যাচ্ছে মৃতের সংখ্যা স্থিতিশীল রয়েছে। ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকাতে লকডাউন আরোপের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে অর্থনীতির ওপর গুরুত্ব আরোপ করছেন প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনা। তার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশটিতে ব্যাপক বিভক্তি তৈরি হয়েছে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় সম্প্রতি দেশটির দুইজন স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেদের পদ ছেড়ে গেছেন। তারা দুজনেই পেশায় ছিলেন ডাক্তার। প্রথম জনকে প্রেসিডেন্ট বহিষ্কার করেন আর পরের জন উগ্র ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর সঙ্গে মতবিরোধের জেরে পদত্যাগ করেন।
রবিবার ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঘোষণায় বলা হয় বিগত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে নতুন করে ৬৪১ জনের মৃতুর মধ্য দিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৬১৭ জনে। একই সময়ে নতুন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ১৭ হাজারের বেশি। সামগ্রিকভাবে ব্রাজিলের চেয়ে বাজে পরিস্থিতিতে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। দেশটিতে ২২ লাখের বেশি আক্রান্ত ও ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে করোনাভাইরাসের হুমকি সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট জইর প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোর পক্ষে-বিপক্ষে ব্রাজিলের রাজপথে বিক্ষোভে নেমেছে হাজার হাজার মানুষ। রবিবার রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় উভয় পক্ষ কংগ্রেস ও সুপ্রিম কোর্ট ভবনের দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে এগোলে তাদের আলাদা করে রাখে পুলিশ। সেখানে বলসোনারো বিরোধী বিক্ষোভকারী নিলভা এপারেসিদা ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্র রক্ষায় এবং বলসোনারোকে দায়িত্ব ছেড়ে যেতে বলতে এসেছি। এই প্রেসিডেন্ট জনগণের ক্ষমতা করায়ত্ত্ব করেছেন আর এখন সহিংসতা ঘটাচ্ছেন। তিনি এই দেশ চালানোর যোগ্য নন।’ ব্রাসিলিয়া ছাড়াও সাও পাওলো এবং রিও ডি জেনেরিও শহরেও বড় আকারের বিক্ষোভ হয়েছে।
ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক সংকটে প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের আহ্বান জানাচ্ছেন বলসোনারো বিরোধীরা। রাজনৈতিক উদ্দেশে পুলিশ ব্যবহারের চেষ্টার অভিযোগে বলসোনারোর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন তিনি। এছাড়া তার ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে আলাদা দুটি তদন্ত চালাচ্ছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।
গত বৃহস্পতিবার দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়ে গ্রেফতার হয়েছেন প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোর এক সাবেক সহযোগী ও পারিবারিক বন্ধু। তবে বলসোনারোর সমর্থকদের দাবি প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা খর্ব করার চেষ্টা করছে কংগ্রেস ও সুপ্রিম কোর্ট।
Leave a Reply