করোনা পরিস্থিতিতে ২০ মার্চ থেকে নাটকের শুটিং বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর অনেক প্রযোজক ও নাট্যকর্মীর দাবিতে আন্তঃসংগঠনগুলো সিদ্ধান্ত দেয়, ১৭ মে থেকে ফের শুটিং করার। তবে স্বস্থ্যবিধিসহ নানা শর্ত আরোপ করা হয়।
শতভাগ না হোক সেই শর্তের অনেকাংশ মেনে চলছে শুটিং। খবর এসেছে মাজনুন মিজান, জ্যোতিকা জ্যোতি, তাসনুভা তিশা, শ্যামল মাওলাসহ অনেক শিল্পী-কুশলী এরমধ্যে ব্যস্ত হয়েছেন শুটিংয়ে।
যদিও শুটিংয়ে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে এরমধ্যে মাজনুন মিজান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘ঘরে থাকার মতো পকেটে টাকা থাকলে আমি শুটিং করতাম না এখন। বলতে পারেন, জীবনের দায়েই শুটিং করতে হচ্ছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই আমরা ইউনিটের সবাই কাজ করছি।’
তবে দেশের জনপ্রিয় সারির বেশিরভাগ শিল্পী-নির্মাতা নিজ নিজ ঘরে বসে এখনও পুরো পরিবেশটাকে পর্যবেক্ষণ করছেন। অন্যদিকে এসে পড়েছে কোরবানির ঈদ। বেশিরভাগ টিভি চ্যানেল নতুন নাটকের অভাবে করছে পুনঃপ্রচার। তাছাড়া, তারকা শিল্পীদের অভাবে অনেক নির্মাতা-প্রযোজক শুটিং করতে চাইলেও পারছেন না। মূলত এই বিষয়টিতে জোর দিয়েই ২২ জুন ভিন্ন মাত্রার একটি উদ্যোগ নিয়েছেন বেসরকারি চ্যানেল আরটিভির প্রধান নির্বাহী সৈয়দ আশিক রহমান। দেশের উল্লেখযোগ্য বেশ ক’জন শিল্পীর বাসায় পাঠিয়েছেন একটি করে চিঠি। যে চিঠিতে তিনি অনুরোধ করেছেন শিল্পীদের শুটিংয়ে ফেরার। তুলে ধরেছেন বেশ কটি মানবিক কারণ। যার মধ্যে অন্যতম হলো, জনপ্রিয় শিল্পীদের অনীহার কারণে অসংখ্য শুটিংকর্মী এখনও কাজে ফিরতে পারছে না। তার ভাষ্যে, ‘আপনারা নাহয় কয়েক মাস কাজ না করে বাসায় থাকতে পারছেন। কিন্তু শুটিংয়ের সঙ্গে জড়িত বেশিরভাগ কর্মী দিন আনে দিন খায়। আপনারা শুটিংয়ে নিয়মিত হলে তারাও কাজ পাবে, বাঁচবে তাদের জীবন ও সংসার। টিভি পর্দাগুলোতেও ফিরবে নতুন নাটক। পুরো টিভি ইন্ডাস্ট্রিতে ফিরবে প্রাণ।’
আরটিভির অনুষ্ঠান প্রধান দেওয়ান শামসুর রকিব স্বাক্ষরিত এই বিশেষ চিঠিটি এরমধ্যে পৌঁছায় মোশাররফ করিম, নুসরাত ইমরোজ তিশা, চঞ্চল চৌধুরী, অপূর্ব, আফরান নিশো, তাহসান খান, মেহজাবীন চৌধুরী, তৌসিফ মাহবুব, তানজিন তিশা ও সাফা কবিরের হাতে। প্রতিষ্ঠানটি এভাবে আরও শিল্পীদের কাছে এই চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা যায়।
চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে চঞ্চল চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চিঠি পেয়েছি। এতে লেখা কথাগুলো হয়তো সত্যি ও মানবিক। তবুও ঠিক জানি না, কবে নাগাদ আবার শুটিংয়ে ফিরতে পরবো। এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। কারণ, আত্মবিশ্বাসটা পাই না।’
চঞ্চল শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রপারলি শুটিং করতে চাইলে কি স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব?জমায়েত মানেই তো সংক্রমণ। আবার এটাও প্রশ্ন, আমাদের অধিকাংশ প্রডিউসার বা ডিরেক্টররা একটা ইউনিটের স্বাস্থ্য নিয়ে আসলে কতটুকু ভাবেন। অতীতে তেমন কোনও প্রমাণ দেখিনি। অতীত তার সাক্ষী। কী পরিমাণ নোংরা পরিবেশে দিনের পর দিন আমরা কাজ করতে বাধ্য ছিলাম- সেটা আর বলে বোঝানো যাবে না। তবুও কাজটাকে ভালোবেসে করেছি।’
দেশের অন্যতম এই অভিনেতা আরও আশঙ্কা প্রকাশ করেন। প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেন, ‘আমার মনে হয় না, হঠাৎ করেই কেউ আমাদেরকে সেই হাইজেনিক শুটিং পরিবেশ তৈরি করে দেবে। যদি দেয়, তেমন আশ্বাস পাই, ভালো। শুটিং করবো। কিন্তু এই মহামারির মধ্যে ঈদের কথা ভেবে এতগুলো মানুষের প্রাণের দায় কে নেবে? যদি কেউ শুটিংয়ে সংক্রমিত হয়! সেই মানুষটার বা সেই ইউনিটের দায়-দায়িত্ব কে নেবে? এই বিষয়গুলো সুরাহা হতে হবে।’
এদিকে ‘সবার জন্য আমরা’ শ্লোগান নিয়ে শিল্পীদের প্রতি পাঠানো ঐ চিঠির ভাষ্য এমন, ‘শুটিং অনুমোদন দেওয়ার পরও পরিস্থিতি বিবেচনায় আপনার মতো জনপ্রিয় শিল্পী নিয়মিত কাজ শুরু না করায় স্বল্প আয়ের শিল্পীরা সীমাহীন অর্থ কষ্টের মধ্যে পড়েছে। সকলের জন্য আমরা- এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে আপনার সহকর্মী ও শুটিং সংশ্লিষ্ট সকলের জীবিকার কথা বিবেচনা করে আগামী ঈদে যে কোনও চ্যানেলে একাধিক নাটক/টেলিফিল্মে অংশগ্রহণ করার বিনীত অনুরোধ করছি। আপনার অংশগ্রহণে হয়তো বাঁচতে পারবে আপনার সহকর্মী ও শুটিং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পরিবার।’
এদিকে শুটিং পাড়া সচল করবার লক্ষ্যে আরটিভি আরও একটি উদ্যোগ নিয়েছে গেল সপ্তাহে। ঘোষণা দিয়েছে প্রথমবারের মতো নিজস্ব প্রযোজনায় প্রতিদিনের ধারাবাহিক নির্মাণের। ‘গোলমাল’ নামের এই বড় পরিসরের ধারাবাহিকে অংশ নেবেন দেশের বেশিরভাগ শিল্পীই। এমনটাই জানায় চ্যানেল সংশ্লিষ্টরা।
Leave a Reply