প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন। ছবি: বাংলানিউজ
কক্সবাজার: সারাদেশে করোনা ভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়লেও এখন পর্যন্ত করোনামুক্ত আছে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন। ফলে দ্বীপের প্রায় দশ হাজার বাসিন্দা এখন পর্যন্ত নিরাপদে রয়েছেন। তবে পর্যটন ও টানা ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকায় বিপাকে দ্বীপের বাসিন্দারা।
দ্বীপের বাসিন্দাদের অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া উপজেলা সদর টেকনাফসহ বাইরে যাতায়াতে কড়াকড়ি আরোপের কারণে এটি সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেন সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ।
নূর মোহাম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকে দ্বীপের সঙ্গে টেকনাফের জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। শুধু সপ্তাহে দু’টি বোট খাদ্যসামগ্রী পরিবহনের জন্য সেন্টমার্টিন-টেকনাফ আসা যাওয়া করছে। এছাড়াও অতি জরুরি চিকিৎসাসেবা গ্রহণের জন্য কারো দ্বীপের বাইরে যেতে হলে শুধু এরাই যেতে পারেন।
তিনি বলেন, এ বিষয়টি বাস্তবায়নে দ্বীপে নৌ-বাহিনী, কোস্টগার্ড, বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করছে।
স্থানীয় চেয়ারম্যানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দেশের সর্ব দক্ষিণে টেকনাফ উপজেলায় অবস্থিত অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের হাতছানি প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। দ্বীপটির আয়তন প্রায় ১৭ বর্গ কিলোমিটার। মূলত ৯টি ওর্য়াড নিয়েই গঠিত হয়েছে সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন। এখানে বসবাস করে ১ হাজার ৪৫৪টি পরিবারের ৯ হাজার ৮১০ জন বাসিন্দা।
দ্বীপে একটি হাইস্কুল ও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়াও ১০ শয্যার একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। বর্তমানে ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবায় নিয়েজিত রয়েছেন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার সৈকত হাসান।
সৈকত বাংলানিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত এই দ্বীপে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হয়নি। তেমন কারো উপসর্গও দেখা যায়নি। সামান্য উপসর্গ দেখা দেওয়ায় তিনজনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। তাদের ফলাফল নেগেটিভ আসে।
তিনি বলেন, দ্বীপের বাইরে যাতায়াতে কড়াকড়ি আরোপের কারণে এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাস থেকে দ্বীপবাসীকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।
তবে সেন্টমার্টিন ইউপি চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে সারাদেশের মতো দ্বীপের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও কর্মহীন হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন এ অবস্থা চলতে থাকায় দ্বীপের মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে অভাব-অনটন।
‘দ্বীপের বেশিরভাগ মানুষ পর্যটন ব্যবসা এবং সাগরে মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে পর্যটন ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ। এছাড়া সাগরে মাছধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকায় দ্বীপের ৯০ শতাংশ মানুষ বেকার।’
তবে খাদ্য সংকট খুব একটা নেই দাবি করে চেয়ারম্যান বলেন, দ্বীপে পরিবার আছে ১ হাজার ৪৫৪টি। এরমধ্যে ৬শ পরিবার কেজিপ্রতি দশ টাকা দামের চাল আর ৮৬১ পরিবার ভিজিডির চাল পায়। এছাড়াও করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকে সাড়ে আট টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আরও ২৫ টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। শিগগিরই এসব চাল বিতরণ শুরু করা হবে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, জেলাজুড়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দিন দিন বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে এখনো সেন্টমার্টিন দ্বীপের কোনো বাসিন্দা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হননি, এটি আমাদের জন্য স্বস্তির খবর। এজন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
জেলা প্রশাসক বলেন, সেন্টমার্টিন যেহেতু মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ, তাই এ দ্বীপের বাসিন্দাদের সুযোগ-সুবিধাও খুব সীমিত। এসব বিষয় বিবেচনা করে বর্তমান সময়ে দ্বীপের মানুষ যেন খাদ্য সংকটে না পড়ে সে বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। সম্প্রতি সেখানে ২৫ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও দেওয়া হবে।
জেলাপ্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ২৮ জুন পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় মোট করোনা রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৪৪৮ জন। এদের মধ্যে ৫০ জন রোহিঙ্গা রয়েছে। জেলায় মৃত্যু হয়েছে ৫ রোহিঙ্গাসহ ৩৯ জনের।
এরমধ্যে টেকনাফ উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দুইশো ছাড়িয়ে গেছে। এবং এ উপজেলায় মোরা গেছেন তিনজন। এছাড়াও সাড়ে সাতশোর বেশি মানুষ সুস্থ হয়েছেন।
অন্যদিকে কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর ল্যাবে গত ১ এপ্রিল থেকে করোনা ভাইরাস পরীক্ষা শুরু হয়। সেই থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত কক্সবাজার, বান্দরবান ও চট্টগ্রামের লোহাগাড়া-সাতকানিয়াসহ মোট ১৮ হাজার ২৯৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে
© All rights reserved 2000-2023 © kalerchaka.Com
Leave a Reply