পারভেজ মোশারফ :
পারভেজ মোশারফ(ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি): চাঁদপুর জেলার
ফরিদগঞ্জে সরকারি নির্দেশনা মেনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো গত মার্চ মাস থেকে কিন্ডারগার্টেনগুলোও বন্ধ রয়েছে। তবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিয়মিত বেতন পেয়ে তাদের সংসার চালানোর মতো অবস্থায় থাকলেও শিক্ষায় আধুনিকি করণের পথিকৃতি হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকরা ভাল নেই । নামমাত্র বেতনে চাকুরি করা প্রায় ৮০টি কিন্ডার গার্টেনের এক হাজার শিক্ষক পরিবার অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে , এই চরম দুঃসময়ে তাদের দিকে তাকানোর কেউ নেই।
জানা গেছে, গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে স্নেহের পরশ মাখানো আদর দিয়ে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কিন্ডারগার্টেনগুলো যাত্রা শুরু করে। তাদের পাঠদান পদ্ধতি ও আধুনিকতা পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে বিপ্লব সাধন করে। এক সময়ের ঢিলেঢালাভাবে চলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে দাঁড়াতে বাধ্য করে। এক সময়ে শহরাঞ্চলে কিন্ডারগার্টেনগুলো থাকলেও এখন তা জালের মতো পুরো দেশে ছড়িয়ে গেছে। প্রত্যন্ত জনপদে এগুলোর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্ত এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে যারা চাকুরি করছেন তাদের নামমাত্র বেতন পেতেন। এই বেতন দিয়ে না চললেও প্রাইভেট পড়ানোর মাধ্যমে তারা তাদের সংসার চালিয়ে নিতেন। সরকার শিক্ষা ব্যবস্থার নতুন এই ধারার সাথে তাল মিলিয়ে ইতিমধ্যেই এসব প্রতিষ্ঠানকে বিনামূল্যে বই দিয়ে তাদেরকে সরকারি কারিকুলামে চলার জন্যে নির্দেশনা দিয়েছে।
কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সাথে কলা বলে জানা গেছে, সরকারি ঘোষণার কারণে হঠাৎ করেই কিন্ডারগার্টেনগুলো মাসের অর্ধেক সময়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া মাসিক টিউশন ফি সংগ্রহ করতে পারেন নি। ফলে মার্চ মাস তো দুরের কথা ফেব্রয়ারী মাসের বেতন দিতে পারেন নি। এরপর প্রায় চার মাস বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা গেছে, যেই প্রতিষ্ঠান এক সময় শিশুদের কোলাহলে মুখরিত থাকতো, আজ এগুলো নিষ্প্রাণ। বিদ্যালয় থেকে পাচ্ছেন না নুন্যতম বেতন, নেই প্রাইভেট পড়ার ব্যবস্থা। ফলে অনেকেই এরই মধ্যে বিকল্প আয়ের পথ খুজে ফিরছেন।
একটি কেজি স্কুলের মাসিক আয় বিদ্যালয়ের ঘর ভাড়া, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সম্মানি ও কর্মচারীর বেতন, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস ও পানির বিলসহ অন্যান্য খরচে সব চলে যায়। যা সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের বরাবরে হিসেব দেখানোর প্রয়োজনীতা আছে এবং অনুমোদিত স্কুলের পক্ষ থেকে হিসেব জমাদানও করা হয়ে থাকে। বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানের আয় তথা টিউশন ফি পাওয়া বন্ধ। তাই এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং কর্মচারীদের কথা চিন্তা করে আর্থিক প্রণোদনা দিলে উপকৃত হবে দেশের শিক্ষক সমাজ-এমনটাই দাবি তাদের।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরের বর্ণমালা কিন্ডারগার্টেনের পরিচালক মামুন হোসাইন জানান, ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৮০ টি কিন্ডারগার্টেন রয়েছে। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি বন্ধ হওয়ার পথে। আমি অনলাইন ও সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছি। হয়তবা শহরের কারণে শিশুদের অভিভাবকরা কিছুটা হলেও আমাদের থেকে পাঠ নিয়ে শিক্ষার্থীদের টেবিলে রাখতে পারছে। আমরা আমাদের অবস্থান থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করলেও অভিভাবকরা যদি আমাদের তথা শিক্ষকদের কথা ভাবতেন, তবে কিন্ডারগার্টেন গুলো কিছুটা হলেও বেঁচে থাকার সুযোগ পেত।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়শেন সাধারণ সম্পাদক মাওঃ জাকির হোসেন বলেন, আমাদের কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকরা দেশের এই দুঃসময়ে চরম অবহেলিত। তারা কারো কাছ থেকেই কোনোরকম সহযোগিতা পাচ্ছে না। সরকারের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো। কারণ এরা লজ্জায় কারো কাছে সাহায্য চাইতে পারছে না। এদের প্রায় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই ফেব্রুয়ারি মাসের সম্মানি শিক্ষকদের দিতে পারেন নি। মার্চের শেষের দিকে ত্রৈমাসিক পরীক্ষা যদি হতো তাহলে আদায়কৃত টিউশন ফি দিয়ে শিক্ষকদের সম্মানি দেয়া সম্ভব হতো। এছাড়া শিক্ষকরা অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে টিউশনি করে সংসার চালান। বর্তমানে তাও বন্ধ রয়েছে। এমতাবস্থায় তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত। সাধারণ ছুটি আরো বাড়লে অনেক প্রতিষ্ঠানই বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে।
© All rights reserved 2000-2025 © kalerchaka.Com
Leave a Reply