ফরিদপুরের সদর উপজেলায় মহামারীর আকারে ছড়িয়ে পড়েছে মাদক এ যেন এক মাদকের স্বর্গ রাজ্য।হাত বাড়ালেই মিলছে সব ধরনের মাদক। বর্তমানে মাদকাসক্ত ও মাদক বিক্রেতা মানুষের সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। এদের মধ্যে বেশি ইয়াবা ট্যাবলেটে আসক্ত, পার্শবর্তী দেশ মায়ানমার ও ভারত থেকেই বন্যার ঢলের মতো আসছে ইয়াবা। ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশের ন্যায় ফরিদপুর সদর উপজেলায় ও বর্তমানে সদর উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে মরণ নেশা ইয়াবা পৌঁছায়নি। এর ছোঁবলে যুব সমাজ ও সৃজনশীল তরুণ প্রজন্মেও একটা অংশ হারিয়ে যাচ্ছে কালো অন্ধকারময় জগতে।
পরিবারকে ফেলছে দীর্ঘস্থায়ী সমস্যায়। আসক্ত তরুণরা ধর্ষণসহ নানা নৃশংস অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন।সচেতন নাগরিকের মন্তব্য ইয়াবা ট্যাবলেট না পেয়ে নিজের ঠোঁট কামড়ায় এছাড়া গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইনসহ মাদকের আসক্তের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
একটি সূত্র জানায়,চাদপুর ৩ উপজেলার সীমান্ত হবার কারনে সহজেই ঢুকে পড়ছে মদ, ফেনসিডিলসহ নানাধরনের মাদক চাঁদপুর থেকে এসব মাদক শহর ও গ্রাম এলাকায় বিক্রি এবং সেবন করছে একটি সিন্ডিকেট।আইনশৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে মাঝে মধ্যে মাদকদ্রব্যসহ ব্যবসায়ী আটক হলেও থামছে না মাদকের চোরাচালান। নিয়মিত চাঁদা দিয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় আর একটি সূত্র জানিয়েছে, রাতের আধাঁরে আনা হয় মাদকের বড় বড় চালান। এসব বড় ধরনের চালান কখনো আইনশৃংখলা বাহিনী আটক করতে না পারলেও মাঝে মধ্যে ছোট ছোট চালান আটক করে থাকে,এক সময় শুধু ফেনসিডিল, হেরোইন ও গাঁজার রাজত্ব ছিল এখানে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন ইয়াবার রাজত্ব শুরু হয়েছে সম্প্রতি, হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবাসহ নানা মাদকদ্রব্য । বাড়ছে মাদকের মহামারী।
সদর উপজেলার যে স্থানে মাদকের ছড়াছড়ি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ধোপাডাঙ্গা আজৈলভেরা চত্বর ফুটবলমাঠ সংলগ্ন ও চাদপুর বাজার ।উপজেলায় ভারতীয় মাদক ও ইয়াবার আলাদা সিন্ডিকেট রয়েছে।
তাদের মধ্যে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা রয়েছেন ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। অজানা কারণে মূল হোতাদের আটক করতে পারছেনা পুলিশ। তবে, ইয়াবার বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের বড় ধরনের কোনো ভুমিকা নেই। অভিযোগ রয়েছে কিছু অসাধু পুলিশ সদস্য মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে।
নিয়মিত বখরা নেয়ায় পুলিশ তেমন ধরনের মাদকের চালান আটক করছেনা।এছাড়াও স্থানীয়রা জানান, এখনও মাদকের মুল হোতারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে,কেন তাদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে না এই প্রশ্ন সচেতন মহলের।
এই বিষয়ে স্হানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সামসুর নাহার মহীদ বলেন, প্রশাসন এই বিষয়ে তেমন ভুমিকা নিচ্ছে না।আমরা বার বার অভিযোগ দেওয়ার পরেও প্রশাসন তেমন উল্লেখযোগ্য কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বরং প্রশাসনের সাথে মাদক ব্যবসায়ীদের সম্পর্ক আমাদের চেয়েও ভাল।
৩ নং ওয়ার্ড মেম্বার ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি আজাদ মেম্বার বলেন, বার বার অভিযোগ দেওয়ার পরেও ওসি সাহেব কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমাদের ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত এস আই জাকির হোসেন উল্টো এলাকার ত্রাস ও বারোটা মামলার আসামী যে তার বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করেন এবং নিয়মিত খাওয়া দাওয়ার পরে টিফিন ক্যারিয়ার ভরে খাবার নিয়ে যান। এইগুলা থেকে স্থানীয় জনগনের মধ্যে ভীতু সঞ্চার হচ্ছে। তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন এই বিষয়ে এসপি স্যারের কাছে অভিযোগ দেওয়ার পরে ওসি বা দায়িত্বপ্রাপ্ত এস আই কেউয়েই আমাদের ফোনেই ধরছে না।
চাঁদপুর ইউনিয়ন শ্রমিক লীগ সাধারণ সম্পাদক লিটন বলেন,আমাদের ইউনিয়ন মাদকের আগ্রাসনে মারাক্তকভাবে আক্রান্ত। পুলিশ দুই /তিনমাস পর পর একটা করে অভিযান চালায়। যাদের ধরে তারা আবার সপ্তাহখানেকের মধ্যেই ছাড়া পেয়ে যায়। তখন তারা আরো বেশি ভয়ংকর হয়ে ওঠে।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ অালিমুজ্জান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন ওই এলাকাটি বর্ডার এলাকা হওয়ায় ওইখানে মাদকের প্রকোপ একটু বেশি। তবে মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি। মাদক ব্যবসায়ী, মাদক সেবক এবং মাদক ব্যবসায় সহায়তা কারী এদের যাকে যেখানেই পাওয়া যাবে তাদের কোন ছাড় নেই। প্রশাসনের জড়িত থাকার বিষয়ে তিনি বলেন এই বিষয়ে আমরা তদন্ত করব যদি কেউ জড়িত থাকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে স্থানীয় জন প্রতিনিধি সহ এলাকাবাসী কেও পুলিশকে সহায়তার করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন জনগণ তথ্য না দিলে তো পুলিশের পক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া কষ্টকর। তবে প্রশাসনের কেউ অসহযোগিতা করলে তিনি সরাসরি তাকে জানাতে জনগণকে অনুরোধ করেন। ওসির সাথে যোগাযোগ করতে তাকে একাধিকবার ফোন দেওয়ার পরেও তিনি ফোন রিসিভ করে নি।
© All rights reserved 2000-2023 © kalerchaka.Com
Leave a Reply