একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা’র চেয়ারম্যান লেখক-গবেষক আবীর আহাদ সম্প্রতি সুনামগঞ্জ জেলার শ্যামারচরে মুক্তিযুদ্ধের বীরাঙ্গনাদের এলাকা-ছাড়া করতে রাজাকার সন্তান ও স্বজনদের বিক্ষোভ সমাবেশ এবং সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নে বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমানের পরিবারের ওপর বর্বরোচিত হামলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় রাজাকার বাচ্চাদের সীমাহীন আস্ফালনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
আজ এক বিবৃতিতে আবীর আহাদ ক্ষমতাসীনদের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাবস্থায় কিসের শক্তিতে বলিয়ান হয়ে রাজাকার ও তাদের বংশধররা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ওপর একের পর এক ন্যক্কারজনক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ? বেছে বেছে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ওপর হামলার ধরন দেখে বুঝা যাচ্ছে যে, রাজাকারের বাচ্চারা একাত্তরে তাদের বাবাদের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে জোটবদ্ধভাবে নেমে পড়েছে ! সর্বত্রই দেখা যাচ্ছে যে, যারা এভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ! কার এবং কাদের প্রশ্রয়ে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারের বাচ্চারা আওয়ামী লীগে ঠাঁই নিয়ে এহেন কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে, তা যদি আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড বুঝতে না পারেন বা বুঝেও না বুঝার ভান করে থাকেন, তাহলে বুঝতে আর বাকি থাকে না যে, আওয়ামী লীগ এখন আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করতে পারছে না, অথবা তারা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছেন !
আবীর আহাদ বলেন, এমন সব জঘন্য ঘটনা ঘটে চললেও প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তো প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না ! তাহলে কি আমরা ধরে নেবো যে, রাজাকার অপশক্তির কাছে প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন শক্তি অসহায় হয়ে পড়েছে বিধায় তারা মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না ! আমরা কি ধরে নেবো যে, এদেশকে স্বাধীন করে আমরা ভুল করেছি ? ভুল করেছি বলেই মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক মর্যাদা ও সুরক্ষা দেয়া হচ্ছে না ! ভুল করেছি বলেই হাজার হাজার অ-মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারদের মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে জামাই আদরে রাষ্ট্রীয় ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি দিয়ে আমাদের মর্যাদাহানি করা হচ্ছে !
আবীর আহাদ বলেন, বঙ্গবন্ধু-কন্যা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলে আমরা জানি এবং বিশ্বাসও করি । তাঁর কারণে মুক্তিযোদ্ধারা একটা মাসিক ভাতা পায়, যদিও তা বর্তমান বাজারমূল্যে খুবই অপ্রতুল । কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের দেখভাল করার জন্য যে ব্যক্তিকে আস্থায় নিয়ে তিনি তাঁকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করেছেন, সেই জনাব আকম মোজাম্মেল হকের কাজটা কী—–তা আমরা যেমন জানি না, তেমনি তিনিও মনে হয় জানেন না যে, তাঁর কাজটি কী ! আজ এতোটি বছর তিনি একনাগাড়ে এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আছেন, অথচ মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থসামাজিক কল্যাণ ও জীবনের নিরাপত্তা বিষয়ে তিনি একেবারেই উদাসীন ! তবে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের এটা দেয়া হচ্ছে, ওটা দেয়া হচ্ছে, বাড়ি দেয়া হচ্ছে, ফ্রি চিকিত্সা দেয়া হচ্ছে বলে প্যাচাল পেড়ে জনসমক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের হেয়প্রতিপন্ন করেছেন । একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনসহ মুক্তিযোদ্ধাদের দাবির মুখে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিতাড়নের বিষয়টি নিয়ে তিনি একেবারেই তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন ।
পরিশেষে আবীর আহাদ বলেন, বর্তমানে সবদিক দিয়ে ভালো অবস্থানে থাকা রাজাকার অপশক্তির এহেন উপর্যুপরি হামলার কবল থেকে যদি স্বাধীনতার সূর্যসৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনের নিরাপত্তা বিধান করতে প্রশাসন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ব্যর্থ হয়, তাহলে নিজেদের জানমাল ইজ্জত রক্ষার্থে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সন্তান ও মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মকে নিয়ে যদি রাজাকার অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে ,তবে রাষ্ট্রীয় পরিস্থিতি কী হতে পারে, সে-বিষয়টি যেন ক্ষমতাসীন সরকার একটু তলিয়ে দেখেন ।
© All rights reserved 2000-2025 © kalerchaka.Com
Leave a Reply