করোনাকালে চারদিকে যখন হতাশা, তখন আশার আলো জ্বালিয়েছে জেলার দিঘীনালা উপজেলার বাবুছড়া এলাকার দুই ভাই। পড়ালেখার পাশাপাশি পোল্ট্রি খামার করে আয়ের ব্যবস্থা করেছেন তারা। ৬০০ বাচ্চা দিয়ে শুরু করা খামারে এখন বাচ্চার সংখ্যা ৪০০০।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, দুই ভাই মশিউর রহমান সজীব সিভিল এবং আশিকুর রহমান সৌরভ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ে। করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায় মার্চে। গ্রামে ফিরে আসে তারা। অবসর সময় কাটাতে দুই ভাই নতুন মোবাইল কেনার অবদার করে স্কুল শিক্ষিকা মায়ের কাছে। মা ছেলেদের ইচ্ছা পূরণে ৭০ হাজার টাকাও দেয়। তবে সে টাকায় মোবাইল না কিনে দুই ভাই বাড়ির ছাদে গড়ে তোলেন পোল্ট্রি খামার। দেড়-দুই মাসের মাথায় ৬০০ বাচ্চা বিক্রি করে খরচ বাদ দিয়ে ৬০-৭০ হাজার টাকা লাভ হয় তাদের।
সজীব জানান, মায়ের দেওয়া টাকায় মোবাইল না কিনে প্রথমে বাড়ির ছাদে খামার করেছি। প্রথমে ৩০০ কোয়েল ও ৩০০ সোনালী মুরগির বাচ্চা নিয়ে খামার শুরু হলেও বর্তমানে সব মিলিয়ে ৪০০০ বাচ্চা রয়েছে। করোনাকালীন অলস আড্ডায় সময় না কাটিয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু আয় করছি, তা বর্তমান ও ভবিষ্যত উভয় সময়ে লাগবে।
ছোটভাই সৌরভ বলেন, ‘কাজের মধ্যে থাকার সংকল্প থেকেই দুই ভাই প্রথমে বাড়ির ছাদে স্বল্প পরিসরে খামার গড়ে তুলেছে। প্রথমে লাভবান হওয়ায় খামার আরও বাড়িয়েছি। বর্তমানে খামার ভালোই চলছে। বাবা-মা দু’জন সমর্থন, সহযোগিতা ও কাজ করে আমাদেরকে উৎসাহ দেওয়ায় খুব সহজেই এগিয়ে যেতে পারছি।’
তাদের মা রূপা মুজিব বলেন, ‘মোবাইল কেনার জন্য টাকা দিলেও ছেলেরা খামার করেছে। প্রথমে বিরক্তি আসলেও মনে হলো ছেলেরা কাজে ব্যস্ত থাকবে, বাইরে যাবে না। এই ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাসের হাত থেকেও বাঁচবে। এই চিন্তা মাথায় রেখে ছেলের বাবাসহ আমরা তাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছি। এখন মনে হয় সিদ্ধান্তটা ভালোই ছিল।’
তাদের বাবা মুজিবুর রহমান বলেন, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়া ছেলেরা খামার করতে পারবে, এমনটা প্রথম বিশ্বাস না করলেও এখন বিশ্বাস হচ্ছে ছেলেরা কাজকে ভালো ভাসেন। তার দুই ছেলে নিজ হাতে খামারে কাজ করছে দেখে ভালো লাগছে।
দিঘীনালা উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা জওহর লাল চাকমা বলেন, দুর্গম বাবুছড়া এলাকাবাসীর জন্য দুই ভাই অনুপ্রেরণার নাম। তাদের দেখাদেখি আরও বেশ কয়েকজন খামার গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস থেকে এসব ক্ষুদে উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
Leave a Reply