কখনও তিনি মেজর জেনারেল আব্দুল্লাহ আল বাকী ওরফে সাইফুল, কখনও ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাইফুল ইসলাম আবার কখনও ডিজিএফআই’র মেজর কামরুল ইসলাম! প্রতিপক্ষকে শাসাতে বা ফাঁসাতে একেক সময় একেক সেনাকর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করার অভিযোগে রাজধানীর ডেমরার ডগারই নতুনপাড়া থেকে বুধবার সকালে এক বয়োবৃদ্ধ প্রতারককে গ্রেফতার করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। তার নাম প্রকৃত নাম শরীফুল ইসলাম শরীফ। পেশায় ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কেরানি হলেও এই ব্যক্তি নিজেকে রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী হিসেবেও পরিচয় দিয়ে আসছেন।
এ সময় তার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী পরিচয়ে প্রকৃত নামে নেওয়া একটি সম্মাননা, ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাইফুল ইসলাম নামে বানানো সিলসহ বিভিন্ন নামে তৈরি করা চারটি সিল উদ্ধার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি এস এম আলমগীর হোসেন জানান, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলমের মোবাইল ফোনে একটি মেসেজ আসে। মেজর জেনারেল আব্দুল্লাহ আল বাকী ওরফে সাইফুল নামে মেসেজে লেখা ছিল ‘প্লিজ কল মি হোয়েন ইউ আর ফ্রি নিড টু টক উইথ ইউ।’ এর কিছুক্ষণ পরই অন্য একটি নম্বর থেকে পুলিশ সুপারের সরকারি নম্বরে কল দিয়ে ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাইফুল ইসলাম পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি জানান, তার স্ত্রী সোনারগাঁয়ের কাচপুর এলাকার সিনহা গার্মেন্টের মালিক। জনৈক রাসেল ভুইয়া সিনহা গার্মেন্টে চাঁদা দাবি করে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়ে আসছেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান সেনা কর্মকর্তা।
ওসি আরও বলেন, এদিকে, একই ব্যক্তি একই নম্বর থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আলমগীর হোসেনের মোবাইল নম্বরে একই এসএমএস পাঠায়। পরে গণভবন থেকে মেজর কামরুল পরিচয় দিয়ে সিনহা গার্মেন্টের মালিক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাইফুল ইসলাম স্যারের মামলাটি গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য বলেন। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল ডেমরা ডগাই নতুনপাড়া এলাকায় যায়।
এসময় ডিবি পুলিশের গাড়ি দেখে দৌড়ে কাছে এসে ওই ব্যক্তি জানান, ‘আমি (অবসরপ্রাপ্ত) বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাইফুল। আমি এসপি ও ডিবির ওসিকে ফোন দিয়েছিলাম।’ তবে তার পোশাক, আচরণ ইত্যাদির সঙ্গে সেনাবাহিনীর ওই পদের একজন কর্মকর্তার স্বাভাবিক আচরণের মিল না পাওয়ায় পুলিশের সন্দেহ তৈরি হয়। এরপর তার কথাবার্তাতেও সন্দেহ হওয়ায় কথিত রাসেল ভুইয়ার বদলে তাকেই আটকে পুলিশ তাদের গাড়িতে তোলে। এরপর সেখানে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে এই ব্যক্তি স্বীকার করেন, ১৯৮১ সালে সেনাবাহিনীতে সিপাহী পদে চাকরিতে ঢুকেছিলেন তিনি। তবে সে চাকরিতে স্থায়ী হননি। সেখানে থেকে পালিয়ে এসে পূবালী ব্যাংকে কেরানি পদে যোগ দেন। ২০০১ সালে অবসরে যান। তিনি স্বীকার করেন, তার স্ত্রী সিনহা গার্মেন্টসের মালিক নন। জনৈক রাসেলের ভুইয়ার সঙ্গে তার বিরোধ চলে আসছিল। তাই তাকে শায়েস্তা করতে বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাইফুল ইসলাম এবং ডিজিএফআইয়ে মেজর কামরুল ইসলাম নামে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে কণ্ঠ পরিবর্তন করে এসপি ও ডিবির ওসিকে ফোন করেছেন তিনি, তাদের মোবাইল ফোনে এসএমএসও পাঠিয়েছেন।
ওসি জানান, তার বাসা তল্লাশির পর তার প্রকৃত নামে রাজনীতিবিদ ও অ্যাডভোকেট পরিচয়ে নেওয়া একটি সম্মাননা স্মারক, সেনা কর্মকর্তা বিগ্রেডিয়ার সাইফুল ইসলাম নামসহ মুন্সীগঞ্জের বাংলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন জনের নামে বানানা চারটি স্ট্যাম্প সিল উদ্ধার করা হয়। যেহেতু তিনি কখনও আইনজীবী ছিলেন না তাই তার ওই পরিচয়টিও প্রতারণার অংশ। এ ব্যাপারে মামলা দায়ের প্রস্তুতি চলছে।
Leave a Reply