আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামালের ৭১তম জন্মদিন আজ। দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত ওয়েবিনারে স্মৃতিচারণা করেছেন আবাহনী ক্লাবের চেয়ারম্যান, শেখ কামালের বন্ধু বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান।
করোনাকাল হওয়ায় এবার অবশ্য ক্লাব প্রাঙ্গনে কিছু করা যায়নি। ভার্চুয়ালি তাতে যোগ দিয়ে শুরুতে বন্ধু শেখ কামালকে নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘প্রত্যেক বছর, আবাহনী প্রাঙ্গনে আমরা শেখ কামালের জন্মদিন পালন করি। করোনার কারণে এ বছর আমরা সেটা করতে পারিনি। আমরা তার জন্মদিন উদযাপন করতে চাই। কিন্তু শোকের মাসের কারণে সেটাকে আলোচনায় সীমিত রাখি।’
শেখ কামাল ছিলেন দূরদর্শী। মাত্র ২৬ বছর বয়সেই অনেকগুলো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন, গড়েছেনও। সালমান এফ রহমানের ভাষায়, ‘কামালকে সবাই চেনেন আবাহনী দিয়ে। কিন্তু তিনি আরেকটা সংগঠন স্পন্দনও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শুধু তাই নয়, স্পন্দনের মাধ্যমে যে মারফতি গান, রক গানের প্রচলন। তাতে কামালের দূরদর্শীতারই প্রমাণ হয় আজকে, এ ধরনের গান খুব জনপ্রিয় হয়ে গেছে। সেই সংগঠনটা এখন দ্বিতীয় প্রজন্মে গেছে।’
সংগঠন গড়লেও শেখ কামাল সব ধরনের খেলাতেই ছিলেন পারদর্শী। খেলতেন ক্রিকেটও। বন্ধুর সেই দিকটির কথাও উঠে এলো তার কথায়, ‘কামাল মাত্র ২৬ বছর জীবিত ছিলেন। এই সময়ে তিনি এতগুলি সংগঠনের সঙ্গে জড়িতই ছিলেন না, সেখানে পারফর্মও করতেন। আজাদের জন্য ক্রিকেট খেলেছিলেন, ফাস্ট বোলারও ছিলেন। ভালো বোলিং করতে পারতেন। বাস্কেটবলে নামি ক্লাবেও খেলতেন।’
এর পরেই সালমান এফ রহমানের স্মৃতিতে উঠে আসে আবাহনীর শুরুর দিককার কথা। কীভাবে ক্লাবটি গড়ে উঠলো মোহামেডান নামক বড় ক্লাব থাকার পরেও, ‘আমার মনে আছে কেন তিনি আবাহনী করতে চাইতেন। তখন ফুটবল ক্লাব একটাই ছিল- মোহামেডান। খেলার মান বাড়াতে প্রতিযোগিতার জন্যই মোহামেডানের মানের আরেকটা ক্লাব তিনি তৈরি করতে চেয়েছিলেন। সে শুধু তৈরি-ই করেননি। এর ফলে আবাহনী-মোহামেডানের প্রতিদ্বন্দ্বিতাও বছরের পর বছর রয়ে গেছে।’
আরও যোগ করেছেন, ‘কামালের অনেক গুণ ছিল। দুটো জিনিষ বলতেই হয়, শুধু খেলোয়াড়দের জন্যই না, অনেকের চাকরির জন্যও তদবির করতেন। সবাইকে সাহায্য করার অনুভূতি কাজ করতো। আমি সব সময়ই বলে এসেছি, যেটা নতুন প্রজন্মের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হওয়ার পরেও শেখ কামাল বিভিন্ন প্রলোভনে পড়তেন না। এমনকি ভাবতেন না নিজের কথাও। বেশ কিছু ঘটনার উল্লেখ করে সালমান এফ রহমান আরও বলেছেন, ‘ওই সময় নতুন দেশ, অনেক ব্যবসায়ীই আমার সামনে তাকে অনেক প্রস্তাব দিয়েছেন। কমিশনের লোভ দিয়েছেন। কিন্তু কেউ বলতে পারবে না কোনও কিছুর সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন। আমরা কিন্তু এর পরে কত বড় বড় প্রধানমন্ত্রী এসেছেন, তাদের পরিবারের ছেলেরা কী করেছেন, সবই জানি।’
‘‘একবার লন্ডন যাচ্ছিলাম, কামালকে বলেছিলাম তার জন্য কী আনবো? ওই সময় যে কেউ বলতো শার্ট আনো, কলম আনো। কিন্তু তিনি বললেন না, আমার আবাহনীর ছেলেদের জন্য কেডস আনতে হবে। জাপান যাচ্ছিলাম, তখন স্পন্দনের জন্য ইলেক্ট্রিক অর্গানও আনতে বলেছিলেন’’
এর পরেই তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন বর্তমান সরকারকে, ‘আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে। আজকে যে রাষ্ট্রীয়ভাবে অনুষ্ঠান করা হলো সে জন্য। যদি শেখ কামাল বেঁচে থাকতো, তাহলে সব চেয়ে বেশি খুশি হতো এই দেখে, যে আজ আমরা ক্রিকেটে অনেক নাম করে ফেলেছি। এটাই তার আসল স্বপ্ন ছিল। এমনকি কামাল বেঁচে থাকলে অলিম্পিকসেও পদক জিততে পারতাম।’
করোনার কারণে অনেক কিছুই বন্ধ হয়ে গেছে। ক্লাবের স্থাপনার কাজও স্থগিত হয়ে গেছে। এ নিয়ে সালমান এফ রহমান আশা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘নির্মাণ কাজ বন্ধ আছে। এখন কত তাড়াতাড়ি আবার চালু করতে পারি দেখি। তবে ডিজাইন সব কিছু চূড়ান্ত হয়ে গেছে। আমরা শুরু করতে যাচ্ছিলাম, তখনই লকডউন হয়ে গেলো। আশা করছি, আমরা আবার শুরু করতে পারবো ইনশাল্লাহ। কাজী নাবিল, পাপন ও অঞ্জনের সহযোগিতা নিয়ে ভবিষ্যতে আমরা আবার চ্যাম্পিয়নশিপও পেতে পারবো।’
Leave a Reply