নিয়ে গর্ব করতেন আর ফয়সলকে বলতেন তোরও বিসিএস ক্যাডার হতে হবে। বাবার প্রত্যাশা পূরণের জন্য তখন থেকেই ফয়সল ভাবতেন পড়াশোনা শেষে বিসিএস দিবেন। এরপর বাবার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে অনার্স চতুর্থ বর্ষ থেকে বিসিএসের জন্য মোটামুটি প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন ফয়সল। অনার্স সম্পন্ন করে নোবিপ্রবিতে মাস্টার্সে ভর্তি হয়ে চলে যান ঢাকায়। ঢাকায় গিয়ে কোচিংয়ে ভর্তি না হয়ে বাসায় বসেই বিসিএসের জন্য নতুন করে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন। ঢাকা থেকে নোয়াখালী এসেই মাস্টার্সের ক্লাস-পরীক্ষা দিতেন। বাবার কাঙ্খিত স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ৩৬তম বিসিএসের সার্কুলার পেয়ে আবেদন করেন ফয়সল। কিন্তু প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ফেল করেন। এরপর ৩৭তম বিসিএসের সার্কুলার পেয়ে আবার আবেদন করেন। তাতেও দ্বিতীয়বারের মতো প্রিলিতে ফেল করেন। দ্বিতীয়বার প্রিলিতে ফেল করার পর ভাবলেন বিসিএস আর হবে না তার দ্বারা। তবে হতাশ হননি তিনি। ৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি দেয়ার পাশাপাশি অন্য জবের জন্য ট্রাই করা শুরু করেন। এরইমধ্যে হঠাৎ
পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর রাজশাহীর সারদায় পুলিশ ট্রেনিং অ্যাকাডেমিতে ট্রেনিং শুরুর দু’মাসের মাথায় বিসিএস প্রিলিমিনারি রেজাল্ট হয়। তৃতীয়বারের প্রচেষ্টায় প্রিলিতে উত্তীর্ণ হন ফয়সল। একদিকে পুলিশের ট্রেনিং অন্যদিকে বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা। ভাবতেন মাঠে এত কঠিন পরিশ্রম করে পড়াশোনা কিভাবে করবেন। বাবা আর ২-৩ জন পুলিশের সহকর্মী খুব উৎসাহ দিতেন বিসিএসের জন্য পড়ার। একবার মনস্থির করলেন পুলিশের জব ছেডেই দিবেন। পরে মতো পাল্টিয়ে চাকরির পাশাপাশিই শুরু করেন বিসিএসের পড়াশোনা। পুলিশ ট্রেনিং অ্যাকাডেমির একটা নিয়ম ছিল রাত ১০ টার পর রুমের লাইট অফ করা। রাত দশটার পর রুমের লাইট জ্বালানোর নিয়ম না থাকায় মসজিদে গিয়ে লিখিত পরীক্ষার জন্য পড়তেন ফয়সল। এ ছাড়া প্রতিদিন দিনের বেলা আইন ক্লাসে আইনের বই ছাডা অন্য বই পডা নিষেধ থাকলেও শিক্ষকের ফাঁকি দিয়ে বিসিএসের জন্য পড়তেন। অবশেষে উত্তীর্ণ হন লিখিত পরীক্ষায়। এবার ভাইভার পালা। ভাইভা দিলেন। ভাবেননি বিসিএস অ্যাডমিন ক্যাডারে সিলেক্ট হবেন। সদ্য প্রকাশিত ৩৮তম বিসিএসের চুড়ান্ত রেজাল্টে নিজেকে
অ্যাডমিন (সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) ক্যাডারে উত্তীর্ণদের জায়গায় দেখতে পেয়ে অনেকটাই অবাক হন তিনি। ফয়সল মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, আমি ভাবিনি আমি অ্যাডমিন ক্যাডারে নির্বাচিত হবো। এজন্য আমার আবেগ অনুভূতি একটু বেশিই। আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি বিধায় আমি অনেক খুশি। অনেক বাধা পোহাতে হয়েছে আমাকে। পুলিশ ট্রেনিং অ্যাকাডেমির নিয়ম রাত দশটায় লাইট অফ করা। আর তাই আমি মসজিদে গিয়ে রাতে পড়েছি। আইনের ক্লাস ফাকি দিয়ে বিসিএসের জন্য পড়েছি। অনার্স-মাস্টার্সে রেজাল্ট তেমন ভালো ছিল না আমার। পুলিশ ট্রেনিংয়ে আমি এক বছরসহ বাংলাদেশ পুলিশে প্রায় আড়াই বছর উপ-পরিদর্শক হিসাবে সততা, নিষ্ঠা, ও মানবিকতার সাথে কাজ করার চেষ্টা করেছি। সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যেখানে পোস্টিং হয় সেখানে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করব, দেশের জন্য কাজ করব। বিসিএস যাদের স্বপ্ন তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি তৃতীয়বারের মাথায় সফল হয়েছি। তাই হতাশ হওয়া যাবে না। লেগে থাকলে সফলতা আসবেই।
Leave a Reply