উন্নতমানের মগা শাস্ত্রী, বনাজী তথা হারবাল ওষুধে যৌন রোগ, বাত, ব্যথা, ডায়াবেটিকসহ নানা রোগের নিরাময় হয়- দেশের বিভিন্ন জেলায় বিভিন্নভাবে এমন প্রচার চালিয়ে হাজার হাজার নারী পুরুষের কাছে ভারত, চীনসহ বিভিন্ন দেশের ব্র্যান্ডের নামে ভুয়া ওষুধ বিক্রির মাধ্যমে প্রতারণা করে আসছিল রাউজানের বাগোয়ান ইউনিয়নের পাঁচখাইন গ্রামের মদন আলীর ছেলে আবদুল হাকিম। রাউজানের নোয়াপাড়া ইউনিয়নের ব্রাক্ষ্মণহাটের পশ্চিম পাশে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের পাশে গড়ে তোলেন ভুয়া এ ওষুধ প্রস্তুতকারী কারখানা। নিজ বাড়িতে এবং নোয়াপাড়ায় আরো দুটিস্থানে ওই ওষুধ প্রস্তুত করা হতো। এসব ওষুধ প্রস্তুতকরণকাজের জন্য রাখে কমপক্ষে ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের পাশে গড়া মূল ভুয়া ঔষধ প্রস্তুতকারী কারখানায় ছিল ৩৫টি মোবাইল কল সেন্টার। যেখানে ব্যবহার করা হয় ১০২টি মোবাইল। এসব মোবাইলের মাধ্যমে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে ওষুধ ক্রেতাদের কাছ থেকে ওষুধের অর্ডার নেয়ার পর বিকাশসহ বিভিন্নভাবে টাকা আদায় করে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ওষুধ পাঠানো হতো। এ ওষুধ বেচাকেনার অন্যতম বাজার চট্টগ্রামের বাইরের লোকজন। নোয়াপাড়ায় গড়ে তোলা ভুয়া এ ভেষজ ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করা হয় ‘টেলি শপিং প্রাইভেট লিমিটেড।’ এছাড়াও এশিয়ান স্কাই শপসহ আরো বিভিন্ন নামে এ ওষুধ সারাদেশে বিক্রি করা হয়। ওষুধের প্যাকেট হেড অফিসের নাম ব্যবহার করা হয় ডাব্লিউ, জেট-১৪২, নগর ইন্ডিয়া। অবশেষে নোয়াপাড়ায় বহু বছর ধরে বহাল তবিয়তে ব্যবসা করে যাওয়া আবদুল হাকিমের অনুমোদনহীন, লাইসেন্সবিহীন যৌন রোগসহ সর্বরোগের ভুয়া ওষুধ প্রস্তুতকারী কারখানায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়েছে র্যাপিড এ্যাকশান ব্যাটেলিয়ন (র্যাব-৭)’র সদস্যরা। গতকাল রবিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ব্যাপক অভিযানে প্রায় ৫০ লাখ টাকার ভুয়া ওষুধ পুড়ে ধ্বংস, তিনজনকে আটক করে কারাদ-, মালিককে ৩ লাখ টাকাসহ ৩৯জনকে মোট ৫ লাখ ৩১ হাজার টাকা অর্থদ- দেয়া হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে ১০২টি মোবাইল। তবে অভিযানের খবর পেয়ে মূল হোতা আবদুল হাকিম ও ম্যানেজার মো. নেছার রহস্যজনকভাবে পালিয়ে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এ অভিযানের নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম হোসেন রেজা। এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা ওষুধ প্রশাসনের ড্রাগ সুপার কামরুল হাসান, উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী ভূমি কমিশনার এহছান মুরাদ, র্যাব-৭’র কর্মকর্তা কাজী মো. তারেক আজিজ, মাশকুর রহমানসহ কয়েকটি গাড়িতে করে আসা র্যাবের সদস্যরা।
উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম হোসেন রেজা ও সহকারী সমীর জানান, ভূয়া এসব ওষুধ প্রস্তুতকরণ ও বিক্রির স্থান হিসেবে ব্রাক্ষ্মণ হাটের পশ্চিম পাশের কারখানা, মালিকের পাঁচখাইনস্থ বাড়ি ও নোয়াপাড়ায় আরো একটি ওষুধ প্রস্তুত কারখানা (বাংলো হিসেবে পরিচিত) অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকার ওষুধ (ওষুধের প্যাকেটের মোড়কে লেখা দর হিসেবে) পুড়ে ধ্বংস করা হয়েছে। এতে এ কারখানার মালিক আবদুল হাকিমকে ৩ লাখ টাকা অর্থদ- দেয়া হয়েছে। সে তার প্রতিনিধির মাধ্যমে এ জরিমানার অর্থ পরিশোধ করেন। এছাড়া তার ভাগিনা আরমানকে ৫০ হাজার টাকা, ৩৫জন কর্মচারীকে ৫ হাজার টাকা এবং আরো ২জন কর্মচারীকে ৩ হাজার টাকা করে জরিমানা আদায় করা হয়। বিভিন্ন লিফলেট, কাগজপত্র জব্দ করে পুড়িয়ে ফেলা হয়। তাছাড়া ওই ভুয়া ওষুধ প্রস্তুত ও বিক্রিকাজে সরাসরি জড়িত থাকার অপরাধে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ৬ মাস করে সশ্রম কারাদ- দেয়া হয়েছে। দ-প্রাপ্ত এসব ব্যক্তিরা হলো পটিয়ার কাশিয়াইশ গ্রামের বদি আলমের ছেলে মো. ইমরান মহিন (২৮), রাউজানের মাঝিপাড়া গ্রামের মৃত আবুল খায়েরের ছেলে হাসান মুরাদ (২৩) ও ডাবুয়া ইউনিয়নের জগন্নাথ হাট এলাকার স্বপন করের ছেলে নয়ন কর (২২)। ভ্রাম্যমাণ আদালত ও র্যাবের প্রায় দিনব্যাপী এ অভিযানের সময় বহু উৎসুক মানুষ সেখানে ভিড় করে। এসময় স্থানীয় সাংবাদিকরা কথিত ওষুধ পুড়িয়ে ধ্বংসের ছবি তুলতে গেলে আবদুল হাকিমের বড় ভাই সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। এদিকে বিভিন্ন সূত্র থেকে খবর নিয়ে জানা যায়, হাকিম তার এলাকা ও আশেপাশের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির ছত্রছায়ায় থেকে এবং মাসোহারা দিয়ে রাউজান থেকে সারাদেশে বিভিন্ন মাধ্যমে চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে যৌন রোগ, বাত, ব্যথা, ডায়াবেটিকসহ সর্বরোগের এ ভুয়া ওষুধের ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা আয় করেছে। সে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের পাশে অবৈধভাবে গড়ে তোলেছে বিশাল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও আরো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে আবদুল হাকিম। সে কয়েকবছর আগেও একবার র্যাবের হাতে ধরা পড়েছিল। মুক্তি পেয়ে সে আবারও একই ব্যবসা করে আসছিল বহাল তবিয়তে। তার এ ব্যবসার নেটওয়ার্ক চট্টগ্রামের চেয়ে অন্যান্য জেলায় বেশি। বিশেষ করে মোবাইলে অর্ডার, টাকা নিয়ে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ওষুধ পাঠানো হতো গ্রাহকদের। ভারতীয় একটি চ্যানেল ও বিভিন্ন মাধ্যমে তার ওই ভুয়া ওষুধের প্রচারণা চালানো হয় বলে জানা গেছে।
Leave a Reply