ডা: সৈয়াদুল ইসলাম জন্ম ১৯৩১ সালে। পিতা মরহুম আবদুল ওয়াহেদ মিয়া ছিলেন ব্রিটিশ সরকারের পোস্টাল ডিপার্টমেন্টের একজন কর্মকর্তা। কর্মস্থল ছিল মিয়ানমারের রাজধানী রেঙ্গুন।
উল্লেখ্য, যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি রেঙ্গুন থেকে পায়ে হেঁটে শ্বাপদসংকুল পথ পাড়ি দিয়ে জন্মস্থান গোপালগঞ্জের রাতইল এসে পৌঁছান সাতষট্টি দিন পর।সফর সঙ্গীদের মধ্যে কয়েকজন ম্যালেরিয়াসহ অন্যান্য রোগে মৃত্যু বরণ করেন।
ডা: সৈয়াদুল ইসলাম প্রাথমিক থেকে ম্যাট্রিক পর্যন্ত লেখা পড়া করেন কলিকাতার বিভিন্ন স্কুলে। ম্যাট্রিককুলেশন করেন ক্যালকাটা মডার্ন স্কুল থেকে ১৯৪৭ সালে।
উল্লেখ্য, কলিকাতা পড়ালেখা কালীন সময়ে হিন্দু মুসুলিম দাঙ্গা শুরু হলে কলিকাতা থেকে ফিরে এসে কিছু দিন খুলনার সেন্ট জোসেফ স্কুলে পড়ালেখা করেন। তখন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন Father Wallstone.
ডা: সৈয়াদুল ইসলাম এবং তাঁর বড় ভাই মরহুম আমিনুল ইসলাম (সিটি,এসবির,এসপি) বাগেরহাট পিসি কলেজে পড়াকালীন সময়ে হোস্টেলে থাকতেন। হোস্টেলের পাশের রুমে থাকতেন কয়েক বছরের সিনিয়র শেখ আব্দুল আজিজ (সাবেক তথ্যমন্ত্রী) যিনি ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বঙ্গবন্ধু মাঝে মাঝে বন্ধু শেখ আব্দুল আজিজের রুমে আসতেন। একই এলাকার লোক হওয়াতে ডা: সৈয়াদুল ইসলাম এবং আমিনুল ইসলামের খোঁজখবর নিতেন এবং স্নেহের চোখে দেখতেন।
ডা:সৈয়াদুল ইসলাম ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট (বর্তমানে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ)’র ছাত্র থাকা কালীন ৫২ ভাষা আন্দোলন শুরু হলে সহপাঠীদের সঙ্গে মিছিল সহকারে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করেন। ১৯৫২ এর ১৯ ফেব্রুয়ারী রাতে প্রাদেশিক ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ভাষা সৈনিক বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনির বাবা এম.এ ওয়াদুদ ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউটে এসে মিটিং করেন। ২১ ফেব্রুয়ারী ছাত্র জনতার উপর নির্বিচারে গুলির প্রতিবাদে ২২ ফেব্রুয়ারী অন্যান্যদের সঙ্গে ডা: সৈয়াদুল ইসলাম মিছিলে যোগ দেন এবং ওই মিছিল থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীতজ্ঞ সনজীদা খাতুনকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ব্রিটিশ আর্মির অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন নুরুদদাহার সাহেব মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং এর আয়োজন করেছিলেন রাতইল হাই স্কুল প্রাঙ্গণে। এই ক্যাম্প থেকেই সেই সময় অনেকে ভারতে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিলেন। প্রশিক্ষণ ইচ্ছুক মুক্তিযোদ্ধাদের মেডিকেল ফিটনেস পরীক্ষা করতেন এবং রাতইল ক্যাম্পে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য করা হয়েছিল একটি হাসপাতাল যার দায়িত্বে ছিলেন তিঁনি।
ডা: সৈয়াদুল ইসলামের সন্তান ডা: আরিফুল ইসলাম সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে ঢাকার আগারগাঁও এর নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় কর্মরত আছেন।
ডা: সৈয়াদুল ইসলাম বিভিন্ন সময়ে রামদিয়া সরকারি এস কে কলেজ, নায়েবুন্নেছা ইনস্টিটিউশনের গভর্ণিং বডির কমিটিতে ছিলেন এবং বর্তমানে একটি মাদ্রাসার সভাপতি।
——হাসিবুল ইসলাম কোটন
© All rights reserved 2000-2025 © kalerchaka.Com
Leave a Reply