স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি বলেছেন, করোনা মহামারি মোকাবিলায় দেশের ৬৮টি কারাগারে আটক বন্দীদের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হয়েছে। করোনার কারণে বন্দীদের দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধ থাকায় তাদের পরিবারের সাথে সপ্তাহে ১ দিন ১০ মিনিট মোবাইলে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। মোবাইলে কথা বলার পাশাপাশি ভিডিও কলের ব্যবস্থা করার জন্য সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
রবিবার সকালে গাজীপুরের কাশিমপুর কারা কমপ্লেক্সের প্যারেড গ্রাউন্ডে ১২তম ব্যাচ ডেপুটি জেলার এবং ৫৯তম ব্যাচ কারারক্ষী ও মহিলা কারারক্ষী বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের প্রশিক্ষণার্থীদের শপথ এবং সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কারাগারে দায়িত্ব পালন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় ভিন্নতর ও চ্যালেঞ্জিং। কারাগারের নিরাপত্তা বিধানের পাশাপাশি বন্দীদের প্রতি মানবিক আচরণ প্রদর্শন ও প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে অপরাধীদের চরিত্র সংশোধন করে সমাজে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আর এ ধরনের উদ্যোগকে সফল করতে হলে কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ প্রদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শারীরিক উৎকর্ষ ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের আন্তরিকতায় রাজশাহীতে কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কাজ চলমান রয়েছে এবং ঢাকার কেরাণীগঞ্জে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি’ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অগ্রযাত্রায় আজকের বাংলাদেশ জেল সমানতালে এগিয়ে চলছে।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত বর্তমান সরকার প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় কারাগারকে সংশোধনাগারে রূপান্তর করতে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছে। কারাগারের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে এবং বৃদ্ধি করা হয়েছে বন্দীদের সুযোগ-সুবিধা। বর্তমান সরকারের আমলেই ২০০ বছরের ইতিহাসের সকালের নাস্তায় রুটি ও গুড়ের পরিবর্তে সপ্তাহে চার দিন সবজি-রুটি, দুই দিন খিচুড়ি, একদিন হালুয়া-রুটি দেওয়া হচ্ছে, যা যুগান্তকারী পরিবর্তন। বাংলা নববর্ষসহ বিশেষ দিবসগুলোতে উন্নত মানের খাবারের জন্য বন্দী প্রতি বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে এবং বিভিন্ন ভাতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, কারাগার এখন কেবল শাস্তি কার্যকর করার জায়গা নয়, বরং কারাবন্দীদের বিভিন্ন প্রকার কর্মমুখী প্রেষণামূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করে সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে দেওয়ার ন্যায় গুরুদায়িত্ব পালন করছে কারাগারগুলো। দেশের সকল কেন্দ্রীয় কারাগারসহ অধিকাংশ জেলা কারাগারে বন্দীদের যুগোপযোগী বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। বন্দী শ্রমে উৎপাদিত পণ্যের আয়ের অর্ধেক বন্দীকে দেওয়া হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন, কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হক, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) পুলিশ কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবির, অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মো. আবরার হোসেন, গাজীপুরের সিভিল সার্জন মো. খায়রুজ্জামান, গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবুল কালাম, গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন, কারা প্রশিকক্ষণ কেন্দ্রের কমান্ড্যান্ট (ভারপ্রাপ্ত) সুরাইয়া আক্তার, কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. গিয়াস উদ্দিন, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর সিনিয়র জেল সুপার মো. আব্দুল জলিল ও গাজীপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. বজলুর রশিদ আখন্দ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনুষ্ঠানে পৌঁছালে কারা মহাপরিদর্শক তাকে স্বাগত জানান। একটি খোলা জিপে করে প্যারেড পরিদর্শন শেষে তিনি রিক্রুট ডেপুটি জেলারদের র্যাংক ব্যাজ প্রদান এবং রিক্রুট প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। কারাগারের পক্ষ থেকে কারা মহাপরিদর্শক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ক্রেস্ট প্রদান করেন। প্রশিক্ষণে ১৩ জন ডেপুটি জেলার, ৩০৬ জন কারারক্ষী এবং ১৫ জন মহিলা কারারক্ষী অংশগ্রহণ করেন।
© All rights reserved 2000-2023 © kalerchaka.Com
Leave a Reply