তুরস্ক থেকে উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় জাতিসংঘের সহায়তা সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা, ত্রুটিপূর্ণ আবহাওয়া ও লজিস্টিক সমস্যার কারণে সহায়তা সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়েছে বলে জানান জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় কার্যালয়ের (ওসিএইচএ) মুখপাত্র মাদেভি সান-সুওনা।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) ওসিএইচএ মুখপাত্র ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটি সড়কের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া কিছু এলাকা বেশ দুর্গম। সবকিছু মিলিয়ে কিছু লজিস্টিক সমস্যা দেখা দেওয়ায় আপাতত আমাদের সহায়তা সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। কখন থেকে পুনরায় শুরু করতে পারবো তাও স্পষ্ট করে বলতে পারছি না।
স্থানীয় সময় সোমবার (৬ জানুয়ারি) ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্ত অঞ্চল। এসময় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন অধিকাংশ মানুষ। পরে আবারও ৭ দশমিক ৬ মাত্রার ও বেশ কয়েকটি আফটারশকে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় দুই দেশের কয়েকটি অঞ্চল।
মার্কিন ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ বলছে, তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় খারমানমারাস প্রদেশের গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে ভূপৃষ্ঠের ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার গভীরে ছিল ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। তুরস্ক-সিরিয়ার পাশাপাশি লেবানন ও সাইপ্রাসেও এ কম্পন অনুভূত হয়েছে।
এ ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজারে পৌঁছেছে। এদিকে, এ ভূমিকম্পের ফলে ১২ বছরের গৃহযুদ্ধের শিকার সিরিয়ায় আবারও দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়। এখনও ধ্বংসস্তূপে চলছে উদ্ধার কাজ। নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজে স্বজনদের আহাজারি যেন থামছেই না।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ৭ দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন। অন্যদিকে, যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া জাতিসংঘের কাছে সহায়তা চেয়েছে।
তীব্র ঠান্ডার মধ্যে উদ্ধারকারীরা মঙ্গলবারও (৭ জানুয়ারি) অনুসন্ধান চালাচ্ছে তুরস্কের বিধ্বস্ত অন্তত ১০টি শহরে। আটকে পড়া লোকজনদের অনেকে ধ্বংসস্তূপের পাহাড়ের নীচে থেকে সাহায্যের জন্য চিৎকার করছে, এমন খবরও মিলছে।
এদিকে, শীতকালীন আবহাওয়া, তুষারপাত ভূমিকম্পে আহত ও গৃহহীন হয়ে পড়া হাজার হাজার মানুষের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে উদ্ধারকার্যক্রম চালিয়ে যাওয়াটাও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (এএফএডি) এক কর্মকর্তা ওরহান তাতার মঙ্গলবার সকালে মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ৩৮১ বলে জানান। তিনি আরও জানান, আহত হয়েছেন আরও ২০ হাজার ৪২৬ জন।
তাতার আরও জানান, ভূমিকম্পে পাঁচ হাজার ৭০০টিরও বেশি ভবন ধ্বংস হয়েছে। এদিক, সিরিয়ায় এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ১ হাজার চারশ ৪৪ জন। আহত হয়েছেন আরও ৩ হাজার ৫০০ জন। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও উদ্ধারকারী হোয়াইট হেলমেট টিম এ তথ্য জানায়।
সোমবার স্থানীয় সময় ৪টা ১৭ মিনিটে এ ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে, যখন দেশটির প্রায় সব মানুষ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। মার্কিন ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ বলছে, তুরস্ক, সিরিয়া, সাইপ্রাস ও লেবানন, ইসরায়েল ও মিশরেও অনুভূত হয় ভূমিকম্প। ৭ দশমিক ৫ মাত্রার কম্পনসহ শত শত আফটারশক তুরস্কে আঘাত হানে। এই ধাক্কার ধারাবাহিকতা ২০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল।
© All rights reserved 2000-2023 © kalerchaka.Com
Leave a Reply