বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর শিল্প ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন হওয়ার সুযোগ নেই। সব দলই নির্বাচনে অংশ নেবে। এমন কি জাতীয় পার্টিও বলেছে, ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে। এদিকে বিকল্প ধারাও নির্বাচনে আসবে। ফলে এ বছর রাজনৈতিক কোনো সংকট তৈরি হবে না। আর জনগণ তো অশান্তি চায় না। জনগণ চায় শান্তি আর উন্নয়ন। এবারের নির্বাচনে সীমিত আকারে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছেন তিনি। গতকাল রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। আগামী নির্বাচনে ঢাকা-১ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী সালমান এফ রহমান বলেন, আগামী নির্বাচনের আগে ও পরে ২০১৪ এবং ২০১৫ সালের মতো সহিংসতা ঘটবে না। সে সময় তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছিল। এখন আর সে রকম পরিস্থিতি নেই। জনগণই তা প্রতিরোধ করবে। মানুষ এখন আন্দোলন চায় না। সহিংসতা চায় না। চায় উন্নয়ন। চায় নিজের আয় বৃদ্ধি।
;মানুষের আয় বাড়ছে। গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ এসেছে। গ্রাম পর্যন্ত মানুষের জীবনমান উন্নয়ন হয়েছে। বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে গেছে। কিন্তু কথা হলো, আপনি যদি না দেখেন তাহলে হবে না। আপনার চোখ আছে আপনি চাইলে দেখতে পারেন, নাও পারেন। স্বীকার করতে পারেন, নাও করতে পারেন। যে কোনো একজন মানুষকে জিজ্ঞেস করুন বুকে হাত দিয়ে বলুক গত ১০ বছরে আপনার অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে কিনা—স্বীকার করলে অবশ্যই বলতে হবে পরিবর্তন হয়েছে। তিনি বলেন, জনগণ নৌকায় ভোট দেবে। এলাকার মানুষ আমাকে চায়। বর্তমানে যে উন্নয়নের ধারা চালু হয়েছে এ যাত্রা অব্যাহত রাখতে হলে আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে হবে। আশা করি জনগণ তা-ই করবে। গত ১০ বছরে গ্রাম এলাকার চেহারা পাল্টে গেছে। এ ছাড়া ২০০১ সালে আমি নির্বাচন করেছিলাম। তখন আমি বাস্তবে জিতেও ছিলাম। কিন্তু রেজাল্ট দেওয়া হয়নি আমার পক্ষে। আর এলাকার সবাই তো আমাকে চাচ্ছে। ফলে আমি জিতব। আমি তো মনে করি গত ১০ বছর সরকার যেভাবে কাজ করেছে তা বিশ্বের কাছে সুন্দর উদাহরণ। বর্তমান বিরোধী দলের মডেলটা যদি আবারও আসে, তাও তো ভালো। যারা এই সংসদকে ভুয়া বলেছিলেন তারা তো বোকা। যদি ভুয়াই হয় তাহলে সংসদীয় সম্বন্ধীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলো বাংলাদেশে কীভাবে হলো। আর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তো এটাকে কেউ ভুয়া বলেনি। আগামীতে আওয়ামী লীগ আবারও সরকার গঠন করলে বিরোধী দলে কারা থাকবেন এ বিষয়ে তিনি বলেন, জাতীয় ইস্যুতে তো আমেরিকাতেও সংসদের বিরোধী দল একমত হয়। আগামীতে যদি আবার জাতীয় পার্টিই বিরোধী দলে যায় সেটা তো ভালো হবে। বিএনপি যদি নির্বাচনে আসে। সংসদে বিরোধী দল হিসেবে যদি চলে যায় হয়তো তারা বর্তমান বিরোধী দলের মতো হবে না। আবার এমনটিও হতে পারে যে, তারা সরকারের সঙ্গে বর্তমান সংসদের মতোই মিলেমিশে কাজ করবে। আবার জাতীয় পার্টি তো বলেছে, তারা ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে। সেক্ষেত্রে তারাও যেতে পারে। ইভিএম ব্যবহারের ব্যাপারে তিনি বলেন, প্রযুক্তির উৎকর্ষতার কারণে আমাদের ইভিএমে যেতে হবে। তবে অবশ্যই সীমিত আকারে। আর ভবিষ্যতে বৃহত্ভাবে যেতে হবে। কেননা আগে তো মানুষকে ইভিএম সম্পর্কে জানাতে হবে বলে তিনি মনে করেন। বর্তমান সরকার কতটা ব্যবসাবান্ধব বলে আপনি মনে করেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা তো শুধু এবার না। ১৯৯৬ সালে যখন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হন তখনো তিনি বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করেছেন। সবচেয়ে বেশি টেলিভিশন, ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, এয়ারলাইনস সবই তো বেসরকারি খাতে দিয়েছেন। এমন কোনো খাত নেই যেটাকে তিনি বেসরকারি খাতের জন্য উন্মুক্ত করেননি। কিন্তু যারা বলেন, বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রীয়করণকে অধিক গুরুত্ব দিতেন— এটা তারা ভুল তথ্য দেন। বঙ্গবন্ধু আসলে যুদ্ধের পর দেশটাকে গুছানোর জন্য তা করেছিলেন। তখন তো বেসরকারিভাবে ব্যবসা করার মতো কেউ ছিলেন না। সে সময় তা না করে কোনো উপায় ছিল না। এখন তো সময় পাল্টেছে। বিশ্বব্যাপী বেসরকারি খাতকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ব্যাংকিং খাতে অব্যাহতভাবে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। ব্যাংক খাত কিছু নির্দিষ্ট মানুষের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে— এ থেকে উত্তরণের উপায় কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে কথা পুরোপুরি ঠিক নয়। খেলাপি বাড়ছে ঠিক কিন্তু ১০ বছর আগে ব্যাংকগুলোর দেওয়া যে ঋণের পরিমাণ ছিল তাও তো এখন অনেক বেড়েছে। ফলে শতাংশের হিসাবে খেলাপি ঋণ খুব একটা বাড়েনি। এ ছাড়া যারা অনিয়ম-দুর্নীতি করছে তাদের তো ধরা হচ্ছে। কাউকে ধরা হচ্ছে না, কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না— এ কথা ঠিক নয়। হলমার্ক, বিসমিল্লাহ, ডেসটিনিসহ অন্য যারা আর্থিক খাতে অনিয়ম করেছে তাদের তো ধরা হয়েছে। কেউ তো পালিয়ে যায়নি। পালাতে পারেনি। তারা জেলে আছে। বিচারও হচ্ছে। কেউ কেউ সরকারকে বিব্রত করতে এ ষড়যন্ত্র করে ব্যাংক খাত সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন। পাশাপাশি ব্যাংক খাতে দুর্নীতি নতুন কোনো বিষয় নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভারত, পাকিস্তান, ইতালি, চীন, ফ্রান্স, পর্তুগাল এমন কি আমেরিকাতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। ব্যাংক খাত নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে যেভাবে অপপ্রচার চালানো হয়েছে, আমাদের ব্যাংক খাত যদি সত্যি সত্যিই দুর্বল হতো তাহলে তো ব্যাংকগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, একটিও বন্ধ হয়নি। শুধু ফারমার্স ব্যাংকে সমস্যা হয়েছে, তা আবার ঠিক হয়ে গেছে বলে তিনি দাবি করেন। ব্যাংক খাতে গ্রাহকের আস্থা কমেনি। মানুষ তো এখনো পথে নামেনি। জনগণ কিন্তু বোকা নয়। যদি আসলেই ব্যাংক খাতে জনগণের আস্থা না থাকত তাহলে মানুষ রাস্তায় নেমে যেত। বলত, আপনার ব্যাংকে আমি টাকা রাখব না। ঋণখেলাপি তো দুই ধরনের হয়। একটা হলো ব্যবসা করতে গিয়ে সমস্যা হয়। লোকসান হয়, তাহলে অন্য কথা। কিন্তু অন্য যেগুলো হলমার্ক, ডেসটিনি, বিসমিল্লাহ, ইউনিপে এদের মতো সেগুলোর ব্যাপারে তো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ভারতের এক ব্যবসায়ী পালিয়ে গেছেন অন্য দেশে কিন্তু আমাদের এখান থেকে কেউ পালিয়ে যাননি।
© All rights reserved 2000-2023 © kalerchaka.Com
Leave a Reply